পবিত্র হজ আজ : লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

সম্পাদকীয়

পবিত্র হজ আজ। ইসলামের সূতিকাগার পবিত্র মক্কা নগরীতে এ বছর ২০ লাখের বেশি মুসলমান সমবেত হয়েছেন হজ পালনের জন্য। হজ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, অবস্থাপন্ন মুসলমানের জন্য অবশ্যপালনীয় ইবাদত। জীবনে অন্তত একবার হজ পালনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে। কাবাকেন্দ্রিক মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এ ইবাদতকে। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজ পালনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আরাফাতের ময়দানে হজ সমাবেশ লাখ লাখ হাজির লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে আজ মুখরিত। এ সমাবেশে দুনিয়ার সব প্রান্ত থেকে নানা জাতি-বর্ণ-ভাষী মুসলমান সমবেত হয়েছেন মহান আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে। হজ পালনের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসীদের আনুগত্য যেমন প্রকাশ পায় তেমন দেহ ও মনকে আল্লাহমুখী করা সম্ভব হয়। এ ইবাদতের মাধ্যমে মোমিনরা আত্মশুদ্ধির সুযোগ পান। হজব্রত পালনের মাধ্যমে বান্দা অতীতের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করে এবং নিষ্পাপ হওয়ার সুযোগ পায়। হজের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। নানা ভাষা বর্ণ জাতির লাখ লাখ মানুষ একই ধরনের পোশাক পরে আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পিত করে। হজ উপলক্ষে মানবজাতির যে মহামিলন ঘটে তা বিশ্বজুড়ে সৌহার্দ্যরে পরিবেশ গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা জোগায়। বিশ্বশান্তি ও পারস্পরিক সহমর্মিতার শিক্ষা দেয় এ ইবাদত।

মহামারি পেরিয়ে স্বাভাবিক সময়ের মতো হজ হচ্ছে এবার। হজ পালনের জন্য সারা বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সৌদি আরবের মিনায় পৌঁছেন এবং মিনায় অবস্থান করাও পবিত্র হজের অংশ। এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২০ লাখের বেশি মুসলমান হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন। এই সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি। উল্লেখ্য যে, করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর ২০২০ ও ২০২১ সালে হজ হয়েছিল সীমিত পরিসরে; তাকে অন্য কোনো দেশ থেকে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিলো না। ২০২২ সালে বিদেশিদের জন্য হজের দ্বার সৌদি সরকার খুললেও ১০ লাখের বেশি মুসলমানকে অনুমতি দেয়নি। এবার পুরোপুরি স্বাভাবিক সময়ের মতো হজ হচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার মুসলমান হজব্রত পালনের অনুমতি পেয়েছেন।

আরবি ‘হজ’ শব্দের অর্থ ও মর্ম খুবই ব্যাপক এবং বিস্তৃত। শব্দার্থের দিক দিয়ে হজ হলো, কোনো কাজের ইচ্ছা করা বা দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। বৈয়াকরণ খলিলের ভাষায়, হজ অর্থ কোনো মহৎ ও বিরাট কাজের জন্য বারবার ইচ্ছা ও সংকল্প করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় হজ হলো, আল্লাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কতোকগুলো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ঘরের জিয়ারতের সংকল্প করা। হজ সম্পাদনে হাজিদের সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত কিছু কাজ করতে হয়। এগুলো হলো খানায়ে কাবা তাওয়াফ করা, মাকামে ইব্রাহিমের পশ্চাতে নামাজ পড়া, সাফা ও মারওয়ায় তাওয়াফ করা, মিনায় গমন করা, মুজদালিফায় অবস্থান করা, শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা, কোরবানি আদায় করে মাথার চুল ছেঁটে ন্যাড়া হওয়া, তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা এবং মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করা ইত্যাদি। এসব কর্মের মাধ্যমে হজের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে হজ করলো কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করলো না, সে আমার প্রতি জুলুম করলো। তিনি আরও বলেছেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করলো, তার জন্য আমার শাফায়াত হয়ে গেলো। হজের এসব ইবাদতের মূল্য কতো অপরিসীম, সহজেই তা বোঝা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে, আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না, তার পূর্ববর্তী গোনাগুলো মাফ করে দেয়া হয়। হজের সুবাস ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে, বিশ্বাসীদের হৃদয়ে হৃদয়ে। আল্লাহর মেহমান হিসেবে যারা এ বছর হজ পালন করছেন তাদের অভিনন্দন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More