ভয়ঙ্কর হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি : মোকাবেলা জরুরি

সম্পাদকীয়

দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি চলতি আগস্ট মাসে আরও ভয়াবহ হতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গত কারণেই ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলে তা কতোটা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে-বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, এমন বিষয়ও বারবার আলোচনায় আসছে যে, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এছাড়া দিন দিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। অন্যদিকে, এটাও লক্ষণীয়, এডিস মশার বিস্তার দ্রুত রোধ করতে না পারলে রোগটি মহামারি পর্যায়ে চলে যেতে পারে বলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন যে, ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার ধরন ও বৈশিষ্ট্য বদলানোর কারণে প্রকৃতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি, ময়লা পানিতে এডিসের অস্তিত্ব পাওয়া, কৃত্রিম আলোতেও এই মশা সক্রিয় থাকা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের আচরণগত পরিবর্তন, দেরিতে বর্ষা শুরু হওয়া ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সারাদেশে এই মশার বিস্তার ঘটার কারণে লম্বা সময় ধরে এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটতে পারে। অন্যদিকে, লক্ষণীয়- অতীতে দেখা গেছে, বৃষ্টিপাত বাড়ার কারণে সাধারণত আগস্ট মাস থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে এবং সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে। যখন আগস্টে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা-তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কতা হওয়া দরকার, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়- যা মারাত্মক আকার ধারণ করে জুনে। জুলাইয়ে এসে তা আরও চরম আকার ধারণ করে। জুন মাসের তুলনায় সাতগুণের বেশি মানুষ জুলাইয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুও হয়েছে বেশি।

এটাও এড়ানো যাবে না যে, এ বছরের প্রথম সাত মাসেই এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। জুলাই পর্যন্ত ৫১ হাজার ৮৩২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ২৫১ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসেই মারা গেছেন ২০৪ জন। ফলে আগস্ট মাস নিয়ে দেখা দিচ্ছে নতুন শঙ্কা- যা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না।

বলা দরকার, তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি এবং এ পর্যন্ত রেকর্ডসংখ্যক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম উচ্চমাত্রায় জ্বর। তাই জ্বর হলেই দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। ডেঙ্গুর ভয়াবহ এই পরিস্থিতির মধ্যে দেশে এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাল ফ্লু’র মরসুমও চলছে। ডেঙ্গুর মতো এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে। বড়দের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। এছাড়া এমনটি জানা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা চলতি বছরের আগস্টে পরিস্থিতি বিরূপ আকার ধারণ করে অতীতের রেকর্ড ছাড়াতে পারে যা কোনোক্রমেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব কমবে না। এর আগে এমন আলোচনাও উঠে এসেছে বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা দেখভাল ভালোভাবে হয় না। এতে এডিসের ঘনত্ব দেখা দেয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিন। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন। সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। ডেঙ্গু সংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More