লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবো কীভাবে

সম্পাদকীয়

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে এমনিতেই জনজীবন বিপর্যস্ত। এর মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। গরমে দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করতে যখন বিদ্যুতের চাহিদা বেশি, সেই সময়েই সরবরাহ কমে যাওয়ায় জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি শিল্পকারখানায় উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। ২ জুন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় রাত ৯টায় ১৪ হাজার ৩৭৭ মেগাওয়াট। এ সময় লোডশেডিং হয় মাত্র ৩৭৫ মেগাওয়াট। এরপর উৎপাদন কমতে থাকে আর লোডশেডিং বাড়তে থাকে। মধ্যরাতের পর উৎপাদন হয় ১১ থেকে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট। ওই দিন দিবাগত রাত একটায় এক হাজার ৯৯২ এবং রাত তিনটায় এক হাজার ৭০৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। সরকারি সূত্রের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন জ্বালানির অভাবে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। এ ছাড়া নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আড়াই হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা বন্ধ রাখতে হয়। বাকি ১৬ হাজার মেগাওয়াট থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। একেই বলে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’ সরকার বিদ্যুতের অবকাঠামো বাড়িয়েছে, শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের প্রাথমিক উৎস গ্যাস, কয়লা ও তেলের সংস্থান করেনি। স্থলভাগ ও সমুদ্র উপকূলে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের চেষ্টা না করে জ্বালানি আমদানিকে আগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অতীতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল, সরকার লাভও করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলেও এখন কমতির দিকে। এলএনজির দামও কমেছে। কিন্তু ডলার-সংকটে পড়ে কয়লা আমদানি করতে না পারায় দুই দফায় বন্ধ রাখতে হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বন্ধ হওয়ার পথে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও স্বীকার করেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে লোডশেডিং বেড়ে গেছে এবং জনগণ কষ্টে আছে। তিনি আশা করছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। কিন্তু কী উপায়ে সেটি হবে, তার রূপরেখা দেননি। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে হলে তেল, গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ নির্বিঘœ করতেই হবে। সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে, গরম কমলে কিংবা বৃষ্টি হলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। জ্বালানি খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও যদি প্রকৃতির খেয়ালের ওপর নির্ভর করতে হয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?  সরকার ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে দেয়ার যে নীতি নিয়েছে, তা থেকে সরে আসতে হবে। সঞ্চালন লাইন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের সরবরাহও ঠিক রাখতে হবে। মানুষ দিনে এক-দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা হয়তো সহ্য করতে পারে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে পারে না। এই প্রচ- দাবদাহের দিনে জনজীবন ও শিল্পকারখানাকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিন। আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতি পরিহার করে মাটির নিচে থাকা গ্যাস সম্পদ আহরণের মাধ্যমে এই খাতকে স্বাবলম্বী করতে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More