সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়

শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম বা সার্ট থেকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কতা জারির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো ব্যাপক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। জানা যায়, ৩১ জুলাই একটি হ্যাকার গ্রুপ হুমকি দিয়েছে যে, ‘আগামী ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে সাইবার আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয়া হবে।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে সার্ট সতর্কতা জারির পাশাপাশি সুরক্ষিত থাকতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা এবং সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। হুমকির বিষয়টিতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও আছে।

ক’দিন আগেই বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে কোটি কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ঘটনা ঘটতে আমরা দেখেছি। মার্কিন প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদ মাধ্যম টেকক্রাঞ্চে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেখানেই প্রকাশ পায়, দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটি’র গবেষক ভিক্টর মারকোপোলোস এসব তথ্য ফাঁসের বিষয়গুলো দেখতে পেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এমনকি টেকক্রাঞ্চও দাবি করে, তারা তথ্য ফাঁসের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশের বিজিডি ই-গভ সার্ট, সরকারের প্রেস অফিস, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশি কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া পায়নি। সংবাদ প্রকাশের পর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অবশ্য জানান, আদতে এটি হ্যাকিং নয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে গোপনীয় এসব তথ্য প্রকাশ্য হয়ে পড়েছিলো; কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবেদনশীল এসব তথ্য ফাঁস কিংবা প্রকাশ্য, যাই হোক তা জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দ্বারা নিয়মিত আপডেট ও নজরদারি এবং নিরাপত্তাবিষয়ক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরো সাইবার সিকিউরিটি কাঠামোতে যে বড় ধরনের গলদ রয়েছে, এটি তারই প্রমাণ। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায়, নাকি তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবে এমনটা ঘটেছে, সে বিষয়ে জবাবদিহিতা থাকা খুবই প্রয়োজন। কেননা এমন সংবেদনশীল বিষয়গুলোয় নিরাপত্তা ত্রুটি থাকলে, সেটার ভুক্তভোগী হয়ে পড়ে রাষ্ট্রের জনগণ। এর আগে ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে, তখনও তা গোপন রাখার প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করেছি। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের প্রবণতা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির জন্য ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ। একটি সাইবার আক্রমণের তথ্য গোপন করা হলে সেটিই হতে পারে আরেকটি হামলার উৎস। এতে একদিকে যেমন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তেমনি ব্যক্তির জন্যও বয়ে আনতে পারে বিপদ।

ভার্চুয়াল জগতে গোপনীয় থাকা যে কোনো রকমের তথ্যই গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাকারদের হাতে চলে গেলে সেটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। যদিও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও তথ্য ফাঁসের নজির রয়েছে। তবে বারবার এমন হওয়াটা সক্ষমতা ও পেশাদারত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির পর সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালে গঠন করা হয় কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম বা সার্ট।

আশা করা যায়, সময়ের হাত ধরে এ বিভাগ আরও শক্তিশালী হয়েছে। ১৫ আগস্ট যে সাইবার হামলার হুমকি এসেছে সরকারের তরফে তা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে-এটাই প্রত্যাশা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More