স্মার্ট ভিলেজ হিজলী : দেশের গ্রামগুলোর জন্য অনুসরণীয়

সম্পাদকীয়

সময়ের পরিবর্তন, আধুনিকায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বাংলাদেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন আর বিশ্বায়নের প্রভাব এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে আমাদের গ্রামগুলো বদলে যাচ্ছে। মানুষের চিন্তা ও মানসিকতায় বহুমুখী পরিবর্তন ঘটছে। গ্রামগুলো হয়ে উঠছে শহর। যতোই নগরায়ণ হোক, তাই বলে কি গ্রাম থাকবে না? সেটিরই যেন উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার হিজলী গ্রাম। আধুনিক সময়ের গ্রামের ধারণা কেমন হতে পারে, সেটিই আমরা দেখতে পাই সেখানে। গ্রাম নিয়ে প্রশান্তির প্রশস্তি যেমন বর্ণনা করে শেষ করা যায় না, অন্যদিকে গ্রামের সমস্যা আর দুঃখের বর্ণনারও শেষ নেই। সেসব সমস্যা আর সংকট মোকাবেলা করেই হিজলী যেন আদর্শ এক গ্রাম। এমন গ্রামের স্বপ্নই আমরা বরাবর দেখে আসছি। একটি সময় পিছিয়ে পড়া এ গ্রামের মানুষ ছিলো খুবই দরিদ্র। এনজিওর ঋণ কার্যক্রমের জাল সেখানে বিস্তার ছিলো। আত্মহত্যা ও বাল্যবিয়ের ঘটনা ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক। কৃষির বাইরে গ্রামের তরুণদের ছিলো কর্মসংস্থানের অভাব। এখন এসব কিছুই আর দেখা যায় না হিজলীতে। গ্রামের নারীরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। আত্মহত্যা, বাল্যবিয়ে, বেকারত্ব দূর হয়েছে গ্রামটি থেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেড়েছে উপস্থিতি। পরিত্যক্ত মাঠ সংস্কার করে হচ্ছে নিয়মিত খেলাধুলা। সবুজায়ন আরও বেড়েছে। বসানো হয়েছে ডাস্টবিন। আক্ষরিক অর্থে হিজলী এখন স্মার্ট ভিলেজ। অনেকে সেই নামেই ডাকে গ্রামটিকে। প্রত্যন্ত এ এলাকাকে বদলে দেয়ার কারিগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা এবং স্থানীয় কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল হাকিম। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর গ্রামের মানুষ, সুধী সমাজ ও জনপ্রতিনিধিদের আগ্রহ-উদ্দীপনায় বদলে গেছে হিজলী। জরিপ করে ২০২২ সাল থেকে ৫০ ধরনের কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। যারই ফলে স্বাস্থ্য বিভাগ গ্রামে একটি ফার্মেসি প্রতিষ্ঠা করে, সেখানে সপ্তাহে একদিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও বসেন। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর গ্রামের দুই শতাধিক নলকূপের পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা নিলো। ব্যাংকগুলো দরিদ্র কৃষকদের কৃষিঋণের ব্যবস্থা করলো। গ্রামের নারী ও বেকার তরুণদের স্বনির্ভর ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে যুক্ত হলো উপজেলা মহিলা অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। সরকারি নানা সেবা পেতে গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য স্মার্ট কার্ডের ব্যবস্থা করেছে উপজেলা আইসিটি বিভাগ। সরকারি দপ্তরগুলো ও স্থানীয় মানুষের সমন্বয়ে একটি গ্রামকে এক বছরের মধ্যে কীভাবে বদলে দেওয়া যায়, সেটিই প্রমাণ করে দেখালেন দুই কর্মকর্তা ও একজন জনপ্রতিনিধি। এর জন্য চাই সদিচ্ছা, কর্মনিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ। সেই সঙ্গে চাই স্বপ্ন দেখা ও তা বাস্তবায়নের অদম্য স্পৃহা। সরকারি কর্মকর্তাদের এমন নেতৃত্বগুণে বদলে যাক আমাদের গ্রামগুলো।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More