চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের বৈঠক :  সিভিল সার্জনের অপসারণসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে ৩ সদস্যের উপ-কমিটি গঠন

প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জনের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসানের অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব। এরই অংশ হিসেবে গত পরশু মানবন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলানায়তনে নেতৃবৃন্দ পরবর্তী করনীয় নির্ধারণে আলোচনাসভায় মিলিত হয়ে আন্দোলন উপ-কমিটি গঠনসহ বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
গতপরশু ও গতকাল দেশের অধিকাংশ ইলেক্ট্রনিক ও প্রিণ্ট গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে। অপরদিকে স্থানীয় ৩টি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান প্রতিবাদ জানিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। এদিকে প্রতিবাদলিপি হাতে পেয়ে প্রতিবেদকও অভিমত পোষণ করে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার চিহ্নিত কিছু বেসকারি ক্লিনিক হাসপাতালসহ বেশকিছু ডায়গণস্টিক সেন্টার সিভিল সার্জনের অনৈতিক সমর্থন ছাড়া চোখের সামনে চলছে কীভাবে তা যেমন তদন্ত করলে প্রমাণ মিলবে তেমনই অন্যান্য অনিয়মের বিষয়েও তদন্তের দাবি অযৌক্তিক নয়। স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তো জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির বৈঠক দীর্ঘদিন আহ্বান না করার কারণে স্বয়ং সভাপতিই বৈঠকে প্রকাশ করেছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনাসভায় মিলিত হন। সরদার আল-আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রিণ্ট ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এবং স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব’র কর্মসূচি পালনের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করা হয়। অভিযুক্ত সিভিল সার্জনের অবিলম্বে অপসারণ, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার তদন্তসহ পেশকৃত ৫ দফা দাবি আদায়ে করণীয় নিয়ে বিষদে আলোচনা করে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়ে একটি আন্দোলন উপ-কমিটি গঠন করা হয়। প্রবীণ সাংবাদিক আজাদ মালিতাকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে শেখ সেলিম ও বিপুল আশরাফকে। পেশকৃত দাবি অবিলম্বে পূরণ না হলে জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিক, সকল পেশাজীবী, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে আন্দোলন বেগবান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে জেলার সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হোক তা আমরা কেউ চাই না। সবকিছু নিরবে মেনে নেয়া যায় না। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচির উপস্থাপিত সভায় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক আজাদ মালিতা, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি কামাল উদ্দীন জোয়ার্দ্দার, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইসলাম রকিব, অর্থ সম্পাদক আতিয়ার রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আহাদ আলী মোল্লা, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খাইরুজ্জামান সেতু, দফতর সম্পাদক আবুল হাসেম, কার্যকরি সদস্য শাহ আলম সনি, রফিক রহমান, নাজমুল হক স্বপন, সাংবাদিক সমিতির সহ সভাপতি শেখ সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে গতপরশু ৮ নভেম্বর সোমবার চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত ৩টি দৈনিক পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের পেশকৃত স্মারকলিপি ও মানবন্ধন কর্মসূচি পালনকালে উত্থাপিত অভিযোগ ও বক্তব্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেছেন, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ল্যাব স্থাপন করার সুযোগ দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে মানবন্ধন শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রকাশিত সংবাদে যে সমস্ত বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা মোটেও সত্য নয়। সম্পূর্ণ বানোয়াট ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। চুয়াডাঙ্গা জেলায় সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অদ্যাবধি সরকারি নিয়ম নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কার্যক্রম পরিচালানা করা হচ্ছে। হাসপাতালে বর্হিবিভাগ, জরুরি বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি পার্র্শ্ববর্তী জেলা থেকেও রোগীগণ চিকিৎসা সেবা নিতে এখানে আসে। বিগত বছর হতে এ পর্যন্ত করোনা প্যান্ডামিক মোকবেলা, ব্যবস্থাপনা, ১৫০ শয্যা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল, আইসিইউ সেবা কেন্দ্র স্থাপন করে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চুয়াডাঙ্গা সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যা চুয়াডাঙ্গাবাসীসহ সর্বজনবিদিত।
প্রতিবাদলিপিতে তিনি আরো বলেছেন, দায়িত্বপালনের সময় এসকল চিত্র চুয়াডাঙ্গা জেলায় স্বাস্থ্যসেবার মনোয়ান হয়েছে বলেই অনুমিত হয়। বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ল্যাবসমূহে সরকারি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করেই পরিচালনার অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়ে থাকে। নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটলে সে সমস্ত ক্লিনিক ও ল্যাব বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। আমার দায়িত্বকালীন সময়ে কোনো দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা আমার জানামতে হয়নি।
সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপির বক্তব্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের পেশকৃত স্মারকলিপির গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বচ্ছ্বতার সাথে তদন্ত করলেই অনেক কিছুর প্রমাণ মিলবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More