যারা সমাজে ইজম ছড়িয়ে হিংসার বীজবোপণ করে তাদের ধর্ম আলাদা হলেও উদ্দেশ্য একই

চুয়াডাঙ্গা জেলা সামাজিক-সম্প্রীতি কমিটির সভায় প্রধান অতিথি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেছেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্প্রীতির সোনার বাংলাদেশ গড়তে। এ জন্য সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। যা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা। অথচ স্বার্থন্বেষী মহল ধর্মের অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত ছড়িয়ে সমাজের সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত করে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। শুধু ইসলাম নয়, নানা দেশে বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদ চক্র সক্রিয় রয়েছে। ফলে সচেতনমহলকে সমাজে সচেতনতার আলো ছড়িয়ে মতলববাজ ধর্মব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বন্ধ করার কাজে আন্তরিক হতে হবে।’

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত আহ্বান জানিয়ে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেন, ‘প্রজন্মকে সুপথে রাখতে যেমন অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি, তেমনই প্রয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কর্তব্যপরায়ণতা। শিক্ষক এবং অভিভাবক আন্তরিক হলে জাতি পাবে অসাম্প্রদায়িক সুন্দর মনের সম্প্রীতি মনা প্রজন্ম। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকম-লিকে আন্তরিক হতে হবে; তেমনই মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনসহ অ্যাসেম্বিলির মাধ্যমে দেশপ্রেম বোধ জাগ্রত করতে হবে। উচ্ছৃঙ্খলতা মেনে নেয়া যাবে না। সন্ধ্যার পর নির্দিষ্ট সময়ের পর শিক্ষার্থীদের বাড়ির বাইরে দেখলে পুলিশি জবাবদিহিতার প্রয়োজন রয়েছে। উঠতি বয়সী টিনএজার শিক্ষার্থীদের কাছে কখনো কখনো অভিভাবকদের অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। পুলিশ প্রশাসনসহ সমাজের দায়িত্বশীল মানুষগুলো এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দিলে অভিভাবকদের মধ্যেও স্বস্তি মিলবে। কোনো বড় ভাই কোনভাবে কোন শিক্ষার্থীকে উস্কালে, বিভ্রান্ত ছড়িয়ে বিপথে নিলে তাকেও চিহ্নিত করতে হবে। এ কাজ খুব একটা কঠিন নয়।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরীন, অরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আরাফাত রহমান প্রমুখ। সভায় উপস্থিত থেকে অভিমত ব্যক্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মালিক, চুয়াডাঙ্গা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি ও জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজুল হক প্রমুখ।

সভার প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা জেলাকে সম্প্রীতির একটি দৃষ্টান্তমূলক জেলা উল্লেখ করে বলেন, যারা সমাজে ইজম ছড়িয়ে হিংসার বীজবোপণ করে তাদের ধর্ম আলাদা হলেও উদ্দেশ্য সেই একই। অস্থিরতা সৃষ্টি করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা। আমরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সামাজিক দায়িত্বপালন করলে আমাদের সমাজে ইজম সৃষ্টি করতে পারবে না। আমরা তা হতে দেবো না। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রত্যাশিত সমাজ গড়বো।

সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে চুয়াডাঙ্গাবাসী দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রেখেছেন। বৈশি^ক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আসন্ন শারদীয় দূর্গা উৎসব শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ বিভাগসহ জেলা প্রশাসন আগাম প্রস্তুতিও নিয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ২৪/২৫ সেপ্টেম্বর ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সম্প্রীতির সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অভিমত ব্যক্ত করে সর্বস্তরের দায়িত্বশীল সকলের সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সুপথে রাখতে আমরা রাতে বিশেষ নজরদারি চালাবো। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকেও সাদা পোশাকে নজরদারি থাকবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More