এক সময়ের যাত্রাপালার নায়ক দামুড়হুদা জগন্নাথপুরের জাকির এখন চা-দোকানি

রতন বিশ্বাস: এক সময়ে বিনোদনের মাধ্যম ছিলো যাত্রাপালা। অভিনয়ের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতেন যাত্রাশিল্পীরা। রূপবান, কমলার বনবাস, লাইলী মজনুর প্রেমকাহিনির মতো পালায় উঠে আসতো বাংলার আদি চিত্রায়িত রূপ। এখন আর সেটা নেই। যান্ত্রিকতার কাছে এরা হেরে গেছেন। এখন যাত্রাশিল্পী ও সংশ্লিষ্টদর দুর্দিন। জীবিকার তাগিদে পেশা বদলেছেন অধিকাংশ যাত্রাশিল্পী। মঞ্চে ওঠে অভিনয় করে দর্শকদের যারা মাতিয়ে তুলতেন তারাই আজ বাস্তবতার কষাঘাতে দিকভ্রান্ত। তাদের মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদাহ ইউনিয়নের জগন্নাথপুরের মৃত কিতাব আলীর ছেলে মো. জাকির হোসেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর যিনি যাত্রাপালায় দাপটের সাথে অভিনয় করেছিলেন তিনি আজ চায়ের দোকান দিয়ে বসে আছেন নাটুদাহের আটকবর মোড়ে। আলাপকালে তিনি বর্তমান সময়ে যাত্রাপালা ও সংশ্লিষ্টদের দুর্দিন নিয়ে তিনি বলেন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, স্মার্ট মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগের কাছে সেকেলে আমরা বড্ড অসহায়। প্রযুক্তির ব্যবহারে দুনিয়া এগিয়েছে বটে, তবে প্রযুক্তি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রামীণ ঐতিহ্য-সংস্কৃতির এই পেশাককে ক্ষতিগ্রস্তও করেছে। এ কারণে আমরা আজ পেশা বদলে ফেলেছি আবার কেউ বেকার জীবন পার করছি।
তিনি বলেন ১৯৭৫ সালে আমি নিজ গ্রামের সবুজ সংঘ সৌখিন নাট্যগোষ্ঠী দিয়ে যাত্রাপালার যাত্রা শুরু করি। পরে চ-ি অপেরা, মনদোশ্রি, চৈতালি বিলাসসহ বিভিন্ন যাত্রাপালায় নায়ক এবং অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করি। বর্তমানে যাত্রাপালা আর চলে না। সংসারের চাহিদা মেটাতে পারি না। অভাব অনটনের কারণে রাস্তার পাশে ভাড়ায় টুনটুনি চায়ের দোকান দিয়ে বসে আছি। সংসারে স্ত্রী, ১ ছেলে, ৩ মেয়ে আছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে ১০ টাকা বা ৫ টাকার ইন্টারনেট খরচ করে বিশ্বের সব বিনোদন পেয়ে যায়। যে যাত্রাপালা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। আজ আর কোথাও তার চর্চা দেখি না। বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে জানেই না যাত্রা কী। বিষয়টি নিঃসন্দেহে কষ্টের ব্যাপার। বাঙালির সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে যাত্রাশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে আমার মত যারা অসহায় জীবনযাপন করছেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।

Comments (1)
Add Comment
  • হাফিজ

    এত পুরাতন একটা দৈনিক, অথচ বানান, দাড়ি/কমা আজ পর্যন্ত ঠিক হল না। দুঃখ জনক। আরও যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করুন।