করোনার কারণে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট জনশূন্য : কয়েক শ’ মানুষ বেকার

সালাউদ্দীন কাজল: করোনার থাবায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট। শুনশান নীরবতা নেমে এসেছে এখানে। চেকপোস্ট চলাকালীন সময়ে সকাল থেকে
সন্ধ্যা পর্যন্ত জয়নগর সীমান্তে হাজার হাজার মানুষের পদভারে মুখরিত
থাকলেও বর্তমানে চলমান করোনা সংকটে তা জনমানবহীনে রূপ নিয়েছে। চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে এখানে বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন ইজিবাইক ও ভ্যানচালকসহ কয়েক শ’ মানুষ। গত আড়াই মাস ধরে এ রুটে একজন ব্যক্তিও বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করেনি। আড়াই মাসে সরকারের রাজস্ব আয় নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে
পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত গত ২০১৯ সালে সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এক বছরে ৬ লাখ ১৪ হাজার ৮০২ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে এ রুটে। এবং চলতি বছরের তিন মাসে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৬ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবারও চালু হয়। এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেটে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচল শুরু হয়।
তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা ষ্টেশনের উপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস চেকপোস্ট স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ট্রেন লাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। বর্তমানে রেল লাইনের পাশ দিয়ে পাঁকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবির উদ্যোগে রাস্তার দু’পাশে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান করা হয়েছে, তা যেন আগতদের সর্বদা অভিবাদন জানাচ্ছে। অপর দিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাঁকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছে। বাংলাদেশের যে কোন সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সাথে ঢাকার দুরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই রুটে যাত্রীদের চলাচল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতের বছর গুলোতে যেখানে সারা বছরে ২০-২৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো সেখানে গত ২০১৯ সালে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫১৫ জন যাত্রী। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ২৮৭ জন অর্থাৎ গত বছর সর্বমোট ৬ লাখ ১৪ হাজার ৮০২ জনের রেকর্ড পরিমান যাত্রী যাতায়াত করেছে। তবে করোনার প্রভাবে চলতি বছরের গত ১৩ মার্চ থেকে এই চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে দেয় দেশটির সরকার। তবে যেসব বাংলাদেশি ভারতে ছিল তাদের আসার সুযোগ ছিল। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী বাদে সবারই আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ফলে
২০১৯ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৫ মাসে যেখানে এ রুট দিয়ে
যাত্রী  যাতায়াত করেছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৫ জন সেখানে এবার চলতি বছরের ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৬ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে (করোনার কারণে ১৩ মার্চ থেকে চেকপোস্ট বন্ধ আছে)। যা গত ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একই সময়ে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৯ জন যাত্রী কম যতায়াত করেছে। করোনার কারণে দীর্ঘ ৩ মাস ধরে চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন চেকপোস্টের সাথে
সংশ্লিষ্ট কয়েক শ’ মানুষ। কোনো কাজ না থাকায় ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বিজিবি সদস্যরা এক প্রকার গল্প গুজব করেই সময় পার করছেন। চেকপোস্ট এলাকার দোকানি বাবলু জানান, চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে এখানে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। যাত্রীদের আনা নেয়ার জন্য পায়ে চালিত ১৫০টি ভ্যানগাড়ি, ৪০-৫০ টি অটোবাইক চলাচল করে। কিন্তু করোনার কারণে গত ৩ মাস ধরে চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় আমরা একদম বেকার হয়ে পড়েছি। চেকপোস্ট এলাকার ভ্যানচালক মো. আব্দুল করিম জানান, বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানসহ আমার ৫ সদস্যের পরিবার। চেকপোস্ট থেকে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী আনা-নেওয়া করে যে টাকা রোজগার হতো তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলতো। কিন্তু করোনার কারণে ৩ মাস ধরে চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় একেবারে বেকার হয়ে পড়েছি। ধার-কর্য করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি।
দর্শনা ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই (উপ-পরিদর্শক) মো. রাশেদুল হক জানান, কোনও যাত্রী নেই। আমরা ইমিগ্রেশনের ১৬ জন পুলিশ সদস্য, কাস্টমস, বিজিবি ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিদিন ডিউটি করছি। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মার্চে চেকপোস্ট চালু থাকা পর্যন্ত এ রুটে যাতায়াত করেছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৬ জন যাত্রী। যাত্রীশূন্য হয়ে পড়ায় রাজস্ব আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে অনেকে কাজ কাম করতো, তারাও বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছেন।
Comments (0)
Add Comment