মাথাভাঙ্গা নদীতে দেশীয় মাছ ধ্বংসের মহাযজ্ঞ

যেকোনো মূল্যে প্রশাসনিক অভিযানের মধ্যদিয়ে নদী অবমুক্ত করার দাবি
মাজেদুল হক মানিক: বাংলা পঞ্জিকার জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাস হচ্ছে দেশীয় মাছের প্রজনন সময়। নদ-নদী ও জলাশয়ে বৃষ্টির নতুন পানিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মধ্যদিয়ে সারা বছরই মেলে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ। মানব দেহের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দেশীয় সেই মাছের প্রজনন মরসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে নিধন করা হচ্ছে ‘মা’ মাছ। মেহেরপুরের মাথাভাঙ্গা নদীর গাংনী উপজেলা অংশে ডাল-নেট ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকারকে দেশীয় মাছের বংস ধ্বংস হিসেবে দেখছেন এলাকার সচেতন মহল।
সরেজমিন খোঁজ দেখা গেছে, মাথাভাঙ্গা নদী দূষণ, স্থানীয়দের প্রবেশাধিকারে বাধা ও দেশীয় মাছের বংশ নিধনের নানা চিত্র। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গাংনী উপজেলার কাজিপুর দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদী এদেশে প্রবেশ করে চুয়াডাঙ্গা জেলা হয়ে ভৈরব নদীতে মিশেছে। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা ও কৃষিকাজের জন্য এলাকার প্রধান এ নদী জনগুরুত্বপূর্ণ।
গাংনী উপজেলার আমতৈল কবরস্থানের পাশ থেকে কোদাইলকাটি গ্রাম পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছ ধরার অসংখ্য ফাঁদ রয়েছে। গাছের ডালপালা আঁটি বেঁধে নির্দিষ্ট দূরত্বে নদীর মধ্যে ফেলে রাখা। দীর্ঘদিন ধরে এ ডালপালা একই স্থানে নদীর তলানিতে লেগে থাকায় এক ধরনের বাঁধ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এ বাঁধ অংশ থেকে মাছ ধরা হয়। এতে ব্যবহার করা হয় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল।
স্থানীয়রা জানান, আমতৈল-মানিকদিয়া গ্রামের বাবলু মিয়া, কোরবান আলী, মুনছুর আলী, সুফল, গোপাল ও মাহতাব মাছ ধরার কাজ করেন। তারা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরে বাঁধ মালিকের সাথে আধাআধি ভাগ করে নেয়। পর্যায়ক্রমে বাঁধ মালিকদের মাছ ধরে দেয়ায় সারা বছরই তারা এ কাজে সময় ব্যয় করে। মাছ ধরার পন্থা ও উপকরণ অবৈধ হলেও প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা না থাকায় এ কাজ তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে।
আমতৈল গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ও রমজান মালিথা বলেন, গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবার খ- খ- ফাঁদ মালিক। মাছ ধরা ও নদীর ¯্রােতের বাঁধা সৃষ্টির জন্য এরা সকলেই দায়ী। ফলে বেআইনি এ কাজের সামাজিকভাবে প্রতিরোধের সুযোগ নেই।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের পুকুর না থাকায় নদীর পানিতে গোসল করে থাকেন। এছাড়াও গবাদি পশুর গোসল ও পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের সেচে নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। মাছ ধরার ফাঁদে কচুরিপনা ও ছেদলা আটকে বছরের বেশিরভাগ সময় নদীর পানির বিষাক্ত থাকে। নদীর পানি গায়ে লাগলে চুলকানি জাতীয় রোগ বালাইয়ে ভুগতে হয়।
আমতৈল গ্রামের বাসিন্দা ও ষোলটাকা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) আব্দুল লতিফ বলেন, স্থানীয় ভূমি অফিসে ও প্রশাসনে অনেকবার মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে। তবে আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাই এখন আর অভিযোগ করতে ইচ্ছে করে না।
আমতৈল গ্রামের ব্যবসায়ী শফিক আহম্মেদ বলেন, বাঁধ দেয়ার কারণে নদীতে জনসাধারণের অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে। তাই যে কোন মূল্যে প্রশাসনিক অভিযানের মধ্যদিয়ে নদী অবমুক্ত করতে হবে।
বিষয়টি গোচরে আনলে গাংনী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, দেশীয় মাছের বংশ বিস্তারে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। বাঁধ ও মাছ ধরার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যদিয়ে নদী দখল অবমুক্ত করা হবে।

Comments (0)
Add Comment