আলোর বাতি হাতে জেড. আলম —————– অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী

চুয়াডাঙ্গার সংবাদপত্র টাওয়ারে যে ক’জন মানুষ আলোর বাতিহাতে মানুষকে পথ দেখিয়ে গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম তারকা জেড. আলম। যে কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশের পর পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে, ব্যতিক্রমী দিক নির্দেশনায় পথ চলেছে তার প্রায় প্রত্যেকটির সাথে যে ব্যক্তিটির নাম স্মরণযোগ্য তাদের মধ্যে জেড. আলমের নাম শীর্ষস্থানীয়।

চুয়াডাঙ্গার নেতৃত্বস্থানীয় সাহিত্য সংগঠন চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের একজন সৃজনশীল নেতৃত্ব প্রদানের গুণের পরীক্ষাতেও সে উত্তীর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সমাদৃত। কোন গ্রন্থের লেখক না হয়েও কবি প্রতিভার গুণে তার জ্যোতি ছড়িয়েছে বোদ্ধা পাঠকদের অন্তর আত্মায়। তার কয়েকটি কবিতা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি এবং জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ‘ সেবকদের’ রাতের ঘুম হারাম করতে ভূমিকা রেখেছে।

অনেকটা ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ গোত্রের মানুষ বিধায় আমরা তার প্রকাশিত গ্রন্থের দেখা না পেলেও তার সম্পাদিত বা প্রকাশনাপত্রে সে জ্যোতির সাথে পরিচিত হয়েছি ক্ষণে ক্ষণে। সৎ পথের মানুষরা তাকে যেমন সম্মান দিতে কুণ্ঠা করতো না তেমনই অসৎরা ভয়ও করতো ঢের। ‘একজন সৎ সাংবাদিকের কোনো বন্ধু নেই’ প্রচলিত প্রবাদের সত্যতা দেখা যায় জেড. আলমের ব্যক্তি জীবনে। তবুও বলতেই হয় যে, সৃজনশীল, প্রতিভাবান, প্রগতিমনা, অসাম্প্রদায়িক এবং উদার চিন্তার একঝাক মানুষ ছিলো তার খুব ধারে কাছেই। সে অর্থে সৎজন ব্যক্তিদের প্রিয়পাত্র ছিলো সে।

ডায়বেটিক, প্রেসারসহ বিবিধ রোগের বাস ছিলো তার শরীরে। রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে তার সচেতনতার ঘাটতি না থাকলেও তেলেভাজা খাদ্যের প্রতি ছিলো এক ধরণের বিশেষ মমত্ব, সখ্য। তাই, ষাটোর্ধ থেকে পয়ষট্টি বছরে পা রাখার পূর্বেই তাকে চলে যেতে হলো অদৃশ্য জগতের আলো আধারের মহারাষ্ট্রে যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না।

জেড. আলম আর কখনও ফিরবে না চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের নেতৃত্বের তালিকায় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে প্রেস কনফারেন্সের বৈঠকে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বলয়ে খ্যাতিমান প্রচার বিমূখ অ-অহংকারী নিরব-শান্ত দর্শক হিসেবে। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে দরাজ কণ্ঠে আর তাকে দেখা যাবে না, যা আমরা দেখে দেখে বহুবার হয়েছি আপ্লুত, বহু স্টেজে।

কাক ডাকা ভোরে নিভৃতচারী সূর্যকে বরণ করার প্রত্যয়ে যে জেড. আলম পায়ে হেটে পৌর রাস্তা চষে বেড়াতো তাকে আর দেখবো না আমরা পরবর্তী কোনো এক সকাল, বিকেল, কিংবা রোদ্দুজ্জ্বল ঝলঝলে দুপুরেও। কেননা, তিন জানুয়ারি দু’হাজার একুশ তারিখ হ’তে তার স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে তার প্রতিবেশী কবরস্থান ‘জান্নাতুল মওলা’ বসতবাড়িতে।

Comments (0)
Add Comment