গাংনীতে বেদেদের পেটে হাজারো পাখি

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী বসতি গেড়েছে বেদে সম্প্রদায়ের কয়েকশ মানুষ। তাদের পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই শিকার করা হচ্ছে হাজারো পাখি। দোয়েল, ঘুঘু থেকে শুরু করে বাজপাখি পর্যন্ত কোনোপাখিই রেহাই পাচ্ছে না তাদের তীরধনুক থেকে। তবে ভাটপাড়ার বিষয়টি নজরে দিলে কঠোর হস্তে তা দমনের ঘোষণা দিয়ে বেদেদের সতর্ক করেছে উপজেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে গাংনী উপজেলার ভাটপাড়ায় কাজলা নদীর পাশে, মড়কা বাজারের পূর্বদিকে এবং তেরাইল বাজারের পাশে স্টুয়ার্ট খাল পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের অস্থায়ী বসতি শুরু হয়। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে কয়েক মাসের জন্য এখানে বসতি গেড়েছেন।

জানা গেছে, বংশ পরমপরায় বেদেদের পেশা সাপ ধরা এবং সাপের খেলা দেখানো। তাদের খাদ্য তালিকার প্রথমেই থাকে শিকার করা পাখি। মূলত তারা তীরধনুক নিয়ে পাখি শিকার করে পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটায়।

স্থানীয়রা জানান, বেদে পরিবারের সকলেই সকাল থেকে তাদের বসতি থেকে বের হয়। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তাজিব বিক্রি কিংবা সাপ খেলা দেখানোর ফাঁকে পাখি শিকার করে। শালিক, ঘুঘু, চড়–ই, বক, টিয়াসহ যে পাখিই সামনে আসে তা-ই হচ্ছে তাদের শিকার। পাখি মাত্রই তারা শিকার করে তাদের অস্থায়ী বসতিতে নিয়ে। ব্যাপকভাবে তারা পাখি শিকার করায় এলাকায় পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে বলে লক্ষ্য করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, প্রথমে বিষয়টি বেদেদের স্বাভাবিক কাজ মনে হলেও পাখির সংখ্যা কমার বিষয়টি এসেছে। কেননা নানা কারণে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছিলো। কিন্তু গেলো কয়েক বছর মানুষের মাঝে পাখি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিকারীদের দৌরাত্ম্য কমেছে। এ কারণে স্থানীয়রা বেদেদের পাখি শিকারেও বাধা দিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, গাংনীর ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক হচ্ছে একটি সংরক্ষিত এলাকা। এখানে থাকা ছোট বড় গাছ-গাছালি ইতঃমধ্যে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। নিরাপদ পরিবেশ অনুভব করে পার্কের বিভিন্ন গাছে নানা জাতের পাখি বাসা বাঁধে আর নিবিঘেœ বংশ বিস্তার করে। কাজলাপাড়ে আসা বেদেদের অনেকে ডিসি ইকোপার্কের ভেতরে দেদারসে পাখি শিকার করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয়দের। প্রাথামিকভাবে বেদেদের স্বাভাবিক পেশাগত কাজ হিসেবে স্থানীয়রা বিবেচনা করলেও পাখি কমে যাচ্ছে তাই নজরে নেয়।

এদিকে ভাটপাড়া থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মানুষ বেদেদের কাছে গিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করতে অনুরোধ করে। শেষ পর্যন্ত গাংনী ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি খাতুন বিষয়টি আমলে নিয়ে বেদে সর্দ্দারের কাছে নির্দেশনা পাঠান। নির্দেশনায় তিনি কঠোরভাবে আইনের দিক তুলে ধরে পাখি শিকার বন্ধ করতে বলেন।

এদিকে বেদে সর্দ্দারের পক্ষ থেকেও স্থানীয় ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে আর পাশি শিকার হবে না। এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পাখি সংরক্ষণে কাজ করা বিভিন্ন এলাকার স্বেচ্ছাসেবীরা।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি খাতুন (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসম্য রক্ষার জন্য খুবই দরকারী। পাখি শিকার দ-নীয় অপরাধ। তাই যদি কেউ পাখি শিকার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সে বেদে হোক কিংবা অন্য কেউ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More