বেগমপুর প্রতিনিধি: দর্শনা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ৮টি কৃষি খামারের ১৮শ বিঘা জমি শর্তসাপেক্ষে লিজ দিয়ে কোটি টাকার ওপরে বাড়তি আয় করেছে। এসব জমি লিজ নিয়ে এলাকার কৃষকেরা আখ চাষের সাথে সাথে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ডাল ও সবজির চাষ করেছেন। আখ বিক্রির পাশাপাশি সাথী ফসল বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জনের প্রত্যাশা করছে চাষিকূল। ফলে চিনিকল কর্তৃপক্ষ এবং লিজ গ্রহীতা উভয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী। অলস জমি লিজ দিয়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষ যেমন মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি আখ পাবে। তেমনি অতিরিক্তি চাষযোগ্য জমি পেয়ে কৃষি খামার এলাকার চাষিরাও খুশি।
দেশের অন্যান্য চিনিকলের যখন নাজুক অবস্থা ঠিক তখনি দর্শনা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ৮টি কৃষি খামারের ১৮শ বিঘা জমি আখ লাগানোর শর্তে লিজ দিয়েছে। লিজ দিয়ে এরি মধ্যে ১ কোটি টাকার ওপরে বাড়তি আয় করেছে। আর ওই সমস্ত জমি লিজ নিয়ে এলাকার চাষিরা আখ লাগানোর পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মসুর, ছোলা, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, কপি, কুমড়া, মুলাসহ বিভিন্ন সবিজর আবাদ করেছে। একদিকে আখ চাষ অন্যদিকে আখের সাথে সাথী ফসলের চাষ করে নতুন দ্বিগন্তের সূচনা করেছে চাষিরা। কয়েকজন লিজ গ্রহীতা চাষি বলেন, সঠিক পরিচর্চা করে আখ লাগাতে পারলে আখেও ভালো লাভবান হওয়া যাবে। মাঝখান দিয়ে সাথী ফসলের অর্থ দিয়ে সকল খরচ উঠে আসবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তাতে চিনিকল যেমন লাভবান হয়েছে অতিরিক্তি চাষের জমি পেয়ে এলাকার কৃষকেরাও খুশি হয়েছে।
চিনিকলসূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় গড়ে ওঠে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ঐতিহ্যবাহী চিনিকল প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় মোট জমির পরিমাণ খামার ৩ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৫৬ একর। প্রতি মরসুমে চিনিকল কর্তৃৃপক্ষ ১৫ থেকে ১৮ একর জমিতে আখ রোপণ করলেও বাকি জমি অলস পড়ে থাকে। পড়ে থাকা জমি থেকে কিভাবে বাড়তি আয় করা যায়; তার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা মাফিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কৃষি খামারের ১৮শ বিঘা জমি আখ চাষের শর্তে লিজ দেয়। যার মধ্যে ঘোলদাড়ি কৃষি খামার বাদে ফুরশেদপুরে ৮৩ একর, বেগমপুরে ১শ একর, ঝাঝরি ৭৭ একর, আড়িয়ায় ১১০ একর, হিজলগাড়িতে ৫০ একর, ডিহিতে ১২৫ একর, ফুলবাড়ি ১০ একর এবং ছয়ঘরিয়ায় ৪৫ একর জমি। যেখানে লিজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১ সেপ্টম্বর ২০২০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাল পর্যন্ত।
কয়েকজন লিজ গ্রহীতা বলেন, পাবলিকের এক একর জমি লিজ নিতে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা লাগে। তাও আবার ১২ মাসের জন্য। সেখানে ১৮ মাসের জন্য চিনিকলের জমি লিজ নিয়েছি। আখের সাথে সাথী ফসল চাষ করার সুযোগ পাচ্ছি। প্রাকৃতিক কারণে অন্যান্য ফসল নষ্ট হতে পারে। আখের ক্ষেত্রে তেমনটা হওয়ার সুযোগ খুবই কম। সব ধরনের আবহাওয়া আখ সহ্য করতে পারে। এটাই বা কম কিসের। আখচাষি জমির, তালেব, শুকুর আলী, জহির, ছানোয়ার, শহিদুল, তাইজেল বলেন, সঠিক পরিচর্যা করে যদি আখ চাষ করা যায় একর প্রতি ২০ থেকে ২৫ টন আখ করা সম্ভব। যার মূল্য দাঁড়াবে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।
একদিকে আখের টাকা অন্য দিকে সাথী ফসলের টাকা পেলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এ ব্যাপারে উপ-ব্যবস্থাপক (মিলস ফার্ম) হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আমাদের আখ চাষ করা দরকার। সেই সাথে জমি লিজ হলে প্রতিষ্ঠান পাবে অর্থ; কমে আসবে ফার্মের লোকসান, উৎপাদন হবে আখ। এখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চিনিকল এবং লিজ গ্রহীতারা উভয়ে লাভবান হচ্ছে। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, আখ লাগানোর শর্তে জমি লিজ দিয়ে চিনিকলটি যেমন বাড়তি আয় করেছে, তেমনি এলাকাবাসী জমি লিজ নিয়ে আখ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ডালসহ সবজির আবাদ করে বাড়তি আয় করবে বলে আশা করছি। সেই সাথে জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। শুধু তাই নয় লিজ গ্রহীতারা অল্প জমিতে আখ চাষ করলে ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারবে তেমনি ফলনও ভালো হবে। ফলে চিনিকলে আখের যেমন ঘাটতি থাকবে না পাশাপাশি আর্থিকভাবে চাষিরা লাভবানই হবে। সমস্ত জমি ফেলে রেখে লাভ কি? পড়ে থাকা জমির সঠিক ব্যবহার করতে পারলে তা থেকে আয় হবেই।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ