কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: খুলনা কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশের দ-ায়মান শাদা একটি গাড়ি থেকে রবারের নল দিয়ে বের করা হচ্ছে তেল। ঘটনাস্থল কালীগঞ্জ উপজেলার বারাবাজার হাইওয়ে থানাসংলগ্ন বাদেডিহি নামকস্থানে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাস্তার পাশে দাড়িয়েছিল প্রাণ কোম্পানির তরল দুধ পরিবহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যান। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলেকে উদ্দেশ্য করে গাড়িটির চালক বললেন, তাড়াতাড়ি কর আজ ২০ লিটার তেল নিবি। চালকটির কথা শুনে ছেলেটি গাড়ির তেলের ট্যাংক থেকে একটি রবারের নল টেনে মাঝারি আকারের একটি কাটা ড্রামের মধ্যে থাকা তেল পরিমাপের বড় পাত্রের ভেতর দ্রুত সেটি চালান করে ২০ লিটার তেল বের করে নেয়। তেল নেয়া শেষ হলে চালক দ্রুত টাকা নিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে। প্রাণ কোম্পানির দুধ বহনকৃত কাভার্ড ভ্যান এর নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো-শ-১৩-০২৮৪। পেট চলে না বলেই এভাবে তেল চুরি করে বক্রি করতে হয়। তেল নামানোর সময় পাশে দাঁড়িয়ে লম্বা দাড়িওয়ালা চালক এই প্রতিবেদককে জানায়। এভাবে একের পর এক ট্রাক আসতে থাকে তেল চুরি করে বিক্রির জন্য। অনেক সময় সারিবদ্ধভাবেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান গুলোকে। এভাবেই তেল চুরি হচ্ছে সরকারি, বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও লোকজনের নিজস্ব গাড়ি থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বারবাজার বাদেডিহি নামক স্থানে মোসলেম উদ্দিন ও তার ছেলে তুহিন দীর্ঘদিন সড়কে এভাবে তেল চুরির ব্যবসা করে আসছে। দিন রাত ২৪ ঘন্টা এভাবে তেল চুরির ব্যবসা হয়ে থাকে জনসম্মুখে। সামনে দোকান পেছনে তেলচোরা মোসলেম উদ্দিনের বাড়ি।
সরেজিমনে দেখা যায়, গাড়ির তেলের ট্যাংক থেকে রবারের নল দিয়ে বিশেষ কায়দায় তেল বের করে ব্যারেলের ভেতর রাখা হচ্ছে। তারপর সেই তেল নিয়ে রাখা হয় ঘরের মধ্যে। গাড়ির চালকরা মূলত এই তেল চুরির সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন ৫০০ লিটারেরও বেশি তেল তারা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। আর পরবর্তী সময়ে সেই তেল চলে যায় এক শ্রেনির অসাধু ব্যবসায়ীর হাতে। তেলের দোকানটি পরিচালনা করেন মোসলেম উদ্দিন ও তার ছেলে তুহিন। মোসলেম যে পরিমাণ তেল কেনেন, তার কিছু অংশ বিক্রি করে দেন সাধারণ চালকদের কাছে,বাকি তেল বিক্রি করেন আশপাশের ব্যবসায়ীদের কাছে। চোরাই তেলের ব্যাবসার বিষয়ে জানতে মসলেমের সাথে কথা বললে,তিনি এ প্রতিবেদককে রাগান্বিত হয় বলেন, ‘আপনার এখানে কি? আমি এখানে বসে এমনি এমনি ব্যবসা করি না। সব জায়গায় আমার মালকরি পৌঁছায় যাই। আইন প্রযোগকারী সংস্থাসহ সকল মহলকে ম্যানেজ না করে এ ব্যবসা করছি বলে আপনার মনে হয়? আমি নিজে সবাইকেই মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা পৌঁছায় দেয়। যা পারেন লিখেন, তাতে আমার কোলো সমস্যা নাই। তেল চুরির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। তেল চোরাকারবারি মোসলেমের বক্তব্য শুনে মনে হয় তিনি বৈধভাবে ব্যবসা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চোরাই তেলের ব্যবসা করে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজপতিদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বীরদর্পে চোরাই তেলের ব্যবসা করে চলা মোসলেম কি কখনো কোনোদিনও আইনের আওতায় আসবে? এমনটিই প্রশ্ন এখন বারোবাজারের স্থানীয় জনগণের মনে।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ