লকডাউনে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

ঘর থেকে বের হলেই পড়তে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেরার মুখে
স্টাফ রিপোর্টার: লকডাউনের প্রথম দিনেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থেমে গেলে এর ফাঁকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে লকডাউন পালনে নিয়মিত টহল দিয়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। লকডাউন ও স্বাস্থ্য বিধি না মানায় বিভিন্ন জনকে জরিমানা করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের চিত্র দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে; চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কাউকে থাকতে দিচ্ছে না তারা। সড়কে থামিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন- এমন সব প্রশ্নের পর যৌক্তিক জবাব দিতে পারলেই সাধারণ মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেয়া হচ্ছে। না হয় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে সবাইকে। রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না। ফলে রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিলো। দোকানপাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। তবে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর আছেন। বৃষ্টির কারণে লোকজন বাইরে বের না হওয়ায় তাদের বেগ পেতে হয়নি। তবে বৃষ্টি ভেদ করে রাস্তায় টহলে ছিলো পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সেনাবাহিনী এবং আনসার সদস্যদের গাড়ি। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে ছিলো। রাস্তায় বের হলেই আইনশঙ্খলা বাহিনীর জেরার মুখে পড়তে হয়েছে।
সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গাতেও শুরু হয়েছে সাত দিনের কঠোর বিধি নিষেধ। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো লকডাউনের প্রথম দিন। লকডাউনের প্রথম দিনে সকাল থেকে শুরু হয় টানা বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে জরুরী প্রয়োজনেও খুব একটা বাইরে বের হয়নি মানুষ। তারপরও প্রশাসন ছিল কঠোর অবস্থানে। বৃষ্টির মধ্যেও লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। সাথে ছিলেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনার জন্য ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিযুক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। তাদের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারবৃন্দ (ভূমি)। লকডাউনের প্রথম দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৬ জনকে ২৯ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ। জীবননগরে অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহিউদ্দিন। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাসান চত্বরে অভিযান পরিচালনা করেছেন জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আমজাদ হোসেন। একাডেমি মোড়ে অভিযান চালিয়েছেন সহকারী কমিশনার ফিরোজ হোসেন। এছাড়া সরোজগঞ্জ বাজারে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাত জাহান, কেদারগঞ্জ বাজারে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার জাকির হোসেন ও নূর পেয়ারা বেগমসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরাবৃন্দ।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কঠোর ভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়ী জেলা প্রশাসন। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণের পাশাপাশি লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ বিভাগ, বিজিবি, আনসারসহ স্কাউটস, বিএনসিসি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে জেলায় ৪ প্লাটুন সেনাবাহিনী ও ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২ প্লাটুন, আলমডাঙ্গায় ১ প্লাটুন এবং দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় ১ প্লাটুন সেনাবাহিনী কাজ করছেন। ৩ প্লাটুন বিজিবির মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলায় ২ প্লাটুন ও জীবননগর উপজেলায় ১ প্লাটুন বিজিবির সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়াও তাদের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। লকডাউনের প্রথম দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৪টি মোবাইল কোর্টে ৫৪ টি মামলায় ৫৬ জনকে ২৯ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় কঠোর লকডাউন দফায় দফায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান সারা দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। করোভাইরাস প্রতিরোধে গোটা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এরই অহিসাবে দর্শনায় কঠোর লকডাউন পালিত হয়েছে। লকডাউন পালনে দিনভর পুলিশের অভিযান ছিলো অব্যাহত। চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম মুনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে দফায় দফায় চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। এঅভিযানে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৬ পথচারীকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে সন্ধা নামার সাথে সাথে দর্শনা জুড়ে বিরাজ করছিলো শুনশান অবস্থা।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ কুমার বসাক। ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ১৮৬০ এর ২৬৯ ধারায় এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৬৬ ধারায় ৯ মামলায় ৯ জনকে ৪ হাজার ২শত টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতায় ছিলেন আনসার সদস্যরা।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, তাই মেহেরপুরের লকডাউন কঠোরভাবে পালনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সাথে যোগ হয়েছে র‌্যাব ও সেনা সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সফলভাবে শহরে লকডাউন পালিত হয়েছে। চলমান লকডাউনে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে হাট বসানোর কারণে মেহেরপুর আমঝুপি হাট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।একইসাথে অযৌক্তিক কারণে বাড়ির বাইরে বের হয়ে ঘোরাফেরা ও চায়ের দোকানে অবস্থান করার অপরাধে মেহেরপুর শহরের ৬ ব্যক্তিকে জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত ।
জানা যায়, চলমান লকডাউনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাট চালানোর সময় মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি হাটে অভিযান চালিয়ে ওই হাট বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে আমঝুপি হাটে ওই ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানো হয়। এর আগে ভ্রাম্যমান আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে হাট ফাঁকা হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি করে তাদের পণ্য সরিয়ে নেন।
এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল আলম বলেন, আগামী ৭দিন মেহেরপুরের কোন হাট বসানো যাবে না। তিনি আরো বলেন, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাঁচা তরিতরকারি সহ মুদিখানার দোকান খোলা রাখা যাবে।এই এক সপ্তাহে মেহেরপুরে যে কয়টি হাট রয়েছে সে হাটগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হবে। এই ৭ দিনের কঠোর লকডাউন চলাকালে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হোটেলে খাবার বিক্রি করা যাবে; তবে হোটেলে বসে খাবার খাওয়া যাবে না। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ানুর রহমান, মেহেরপুর সদর থানার এসআই শুভ এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম আমঝুপি বাজারসহ আমঝুপির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় পথচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন ও অযাথা বাইরে আসা যাবে না। জরুরি প্রয়োজনের বাইরে আসলেও অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।
এদিকে অযৌক্তিক কারণে বাড়ির বাইরে বের হয়ে ঘোরাফেরা ও চায়ের দোকানে অবস্থান করায় একই দিন সন্ধ্যার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ ব্যক্তির নিকট থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদুল আলম ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চায়ের দোকান খোলা এবং চায়ের দোকানে বসে থাকার অপরাধে ৬ ব্যক্তির নিকট থেকে এক হাজার ২শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কঠোর লকডাউনের শুরুর দিন মেহেরপুরেও প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৮টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। এদিকে লকডাউনে মেহেরপুর জেলা শহর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা শহরের ওষধের দোকানপাট বাদে সকল ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। মানুষ চলাচল নেই বললেই চলে। ভোর থেকে শহরগুলোতে কিছু সংখ্যক পুলিশ মাঠে রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের টহল দেখা যায়নি। অন্যদিকে, লকডাউন বাস্তবায়নে গাংনী উপজেলা শহরে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছেন গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাতদিনের কঠোর লকডাউন মুজিবনগরে সর্বাত্মক পালিত হচ্ছে। কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে সেনাবাহিনীর মুজিবনগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে যশোর সেনানিবাস ১৭ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের মেজর আসিফের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা বিকেলে মুজিবনগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় পথচারীদের দাঁড় করিয়ে বাইরে আসার কারণ জানতে চান এবং পরবর্তীতে বাইরে না আসার আহ্বান জানান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More