স্বামীর নির্মম নির্যাতন : মা ও গর্ভের পুত্রসন্তান চিরো নিদ্রায় 

বেগমপুর প্রতিনিধি: দ্বিতীয় সন্তানের মা হতে পারলেন না চুয়াডাঙ্গা বালিয়াকান্দির ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রুনা। অনাগত সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ঘাতক বাবার নির্মম নির্যাতনে মায়ের সাথে খুন হতে হলো গর্ভের পুত্রসন্তানের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাকে হারাতে হলো পাঁচ বছরের শিশু সন্তান হোসেনকে। পাষ- স্বামী সাইদুর রহমান ছেলে হোসেনের নামে ২ বিঘা ৫ কাঠা জমি লিখে দিয়ে দুটি খুনের মামলার হাত থেকে বাঁচতে চালিয়েছেন অপচেষ্টা। কিন্তু এ আপস মানতে নারাজ গৃহবধূ রুনার মা ফিরোজা বেগম। হত্যার অভিযোগ থাকায় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে রুনার লাশের।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের রনগোহাইল গ্রামের মগরেব মিস্ত্রীর মেয়ে রুনা খাতুনের ২০০২ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কুতুবপুর ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি গ্রামের স্কুলপাড়ার ওমর সর্দ্দারের ছেলে সাইদুর রহমানের সাথে। বিয়ের পর থেকে নানাছুতই রুনার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন সাইদুর। নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সময় রুনা পিতার বাড়িতে চলে আসতেন। মেয়েদের বিয়ে একবারই হয় এমন বুঝ দিয়ে মা ফিরোজা বেগম মেয়েকে পাঠিয়ে দিতেন স্বামীর বাড়ি। ফিরোজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, রুনার ওপর তার স্বামী সাইদুর, দেবর মজিদ ও মজিদের স্ত্রী হাজেরা বেগম উঠতে বসতে দোষত্রুটি ধরে মারধর করতো। এমনকি আমি শাশুড়ী হওয়া সত্বেও আমাকেও মারধর করেছে জামাই। সবকিছু সহ্য করে নিয়েছি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। তারপরও তাদের হাত থেকে রেহায় পায়নি আমার মেয়েটা। গত শনিবার ফোনে আমার সাথে কথা হয়। কবে আসবি মা। আমি শীতের পিঠা খাবো। ২৮ জানুয়ারি তোর ডেলেভারি হবে তার আগেই আসবো। মায়ের সাথে মেয়ের শেষ কথোপোকথন। গর্ভে পুত্রসন্তান। অনেকের মুখে হাসি থাকলেও পাষ- স্বামী সাইদুরের মুখ ছিলো বিষেভরা। কারণ প্রথম সন্তান হোসেনকেই কয়েকবার মেরে ফেলতে যায় সাইদুর। আবারও পুত্রসন্তান আসছে। এটা সে মেনে নেতেই পারছিলো না। নানা ফিরোজার কলে থাকা হোসেন আদআদ ভাবে জানায়, মাকে হাত দিয়ে অনেক মারধর করেছে বাবা। তাই মা মরে গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন রোববার দুপুরে সাইদুর বাড়িতে এসে ভাত চাই। এসময় রুনা গোসল করে এসে ভাত খেতে বলে। সাইদুর গোসল করে এসেই ভাত চাইলে রুনা বলে তেল মেখে নাও। ভাত তরকারি রেডি করা আছে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় সাইদুর। এসময় রুনাকে চড়থাপ্পড় মেরে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দরাজা লাগিয়ে দেয় সাইদুর। রুনার গলাই থাকা ওড়না দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালান। রুনার গুঙড়ানিতে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ঘরের দরজা খুলে দেখতে পান রুনার গলাই ওড়না পেচানো আছে। আর মুখ দিয়ে গেজা উঠছে। সাথে সাথে রুনাকে ঘর থেকে বের করে হাটাহাটি এবং মাথায় পানি ঢেলা হলেও অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের নিকট সত্য লুকিয়ে অন্তঃসত্ত্বার কারণে খিচুনি হচ্ছে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। ডাক্তার মৌখিক বর্ণনা শুনে চিকিৎসা দেয়ার এক পর্যায় তার মৃত্যু হয়। আবারও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হাসপাতাল থেকে রুনার লাশ ছাড় করিয়ে নেন সাইদুরের লোকজন। পথিমধ্যে ডিঙ্গেদহ বাজারে এসে রুনার লাশ তুলে দেয়া হয় তার মায়ের হাতে। রুনাকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তোলা হলে হিজলগাড়ি ক্যাম্প পুলিশের এসআই তাপস সরকার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠান। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করে পরিবারের লোকজন। জনশ্রুতি রয়েছে পাষ- সাইদুর দুটি হত্যাকা-ের মামলা থেকে বাঁচার জন্য ছেলে হোসেনের নামে ২ বিঘা ৫ কাঠা জমি দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। কিন্তু এ আপস মানতে নারাজ রুনার মা ফিরোজা বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের সুখের জন্য সবকিছু করেছি। নগদ টাকা, গরু, ছাগল বিক্রির টাকা সব তার হাতে তুলে দিয়েছি। সে তার ছেলেকে জমি দিয়েছে সেটা তার ব্যাপার। সাইদুর আমার মেয়ে রুনা এবং আগত পুত্রসন্তানকে হত্যা করেছে। আমি দুটি খুনেরই বিচার চাই। প্রতিবেশীরা জানান, ফিরোজার ভিটে জমিকুটু ছাড়া কিছুই নেই। সব তার মেয়ে জামাইয়ের জন্য শেষ করেছে। মামলা করার মতো সামর্থ তার নেই। মেয়েকে হারিয়ে এখন সে পাথর হয়ে গেছে। এসআই তাপস সরকার বলেন, গৃহবধূর স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে অসঙ্গতি দেখা দেয়ায় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলেই সব জানা যাবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সাজিদ হাসান বলেন, স্পর্সকাতর মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য নয়। ফরেনসিক রিপোর্ট আসলেই সব পরিষ্কার হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More