প্রতিশোধ নিতে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক নাসুকে পরিকল্পিতভাবে ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যা!

দামুড়হুদায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত নাসরুল্লাহকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন শরীফ উদ্দিন ও তার দুই ছেলে
স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার গৃহশিক্ষক নাসরুল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গুলশানপাড়ার বাসিন্দা নাসুরুল্লাহ ওরফে নাসু। তখন ঘটনাটিকে সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা হলেও ১৪ মাস পর নাসুর পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে, পরিকল্পিতভাবে ছক করে তাকে ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনের ছকটি কী ছিলো, তা উদঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিবার। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নাসরুল্লাহ ওরফে নাসুর মৃত্যুর ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, পরকীয়া প্রেমের প্রতিশোধ নিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মোবাইলে ডেকে নিয়ে দ্রুতগামী ট্রাকের সামনে ফেলে এ হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। এর পেছনের নায়ক হিসেবে দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শরীফ উদ্দিন এবং তার দুই ছেলে তাহমিদ ও আমজাদকে দায়ী করেছে নাসরুল্লাহর পরিবার। পাশাপাশি পরিবারটির দাবি, এ হত্যাকা- পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শরীফ উদ্দিনের স্ত্রীকে ব্যবহার করে ফাঁদ পাতা হয়েছিলো। নাসরুল্লাহর মৃত্যুর প্রায় ১৪ মাস পর গতকাল সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এ দাবি করে নাসুর পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাসরুল্লার বাবা দামুড়হুদা গুলশানপাড়ার বাসিন্দা মো. মমজেদ আলী। এসময় উপস্থিত ছিলেন নাসরুল্লাহর স্ত্রী মুন্নী খাতুন ও একমাত্র সন্তান তাহমিদ উল্লাহ (৫), মা নুরজাহান বেগম, বড় বোন নাজমা বেগম, মেজ বোন রাহিমা খাতুন, খালু আবুল হোসেন, খালাতো ভাই মাফিজুর রহমান এবং তাদের আইনজীবী আবু তালেব।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্কুলশিক্ষক শরীফ উদ্দিনের দামুড়হুদা গুলশানপাড়ার বাসায় সাত বছর বয়সী মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতেন নাসরুল্লাহ। এক পর্যায়ে শিক্ষকের দ্বিতীয় স্ত্রী রতনা খাতুনের সঙ্গে নাসরুল্লাহর প্রেম হয়। বিষয়টি জানাজানির পর তার প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নাসরুল্লাহকে ফাঁদে ফেলতে শরীফ উদ্দিন ছক আঁকেন এবং ঘনিষ্ঠ একজনকে কাজে লাগিয়ে রতনা ও নাসরুল্লাহর কথোপকথন রেকর্ড করেন। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর দামুড়হুদা গুলশানপাড়ায় সালিসের আয়োজন করা হয়। দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুর সভাপতিত্বে ওই সালিস অনুষ্ঠিত হয়। সালিসে নাসরুল্লাহকে ১০০ বেত্রাঘাত ও ১০০ বার কান ধরে ওঠবস করার পাশাপাশি এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সালিসের আসরেই শিক্ষক শরীফ উদ্দিন ও তার স্ত্রী রতনা খাতুন পরস্পরকে তালাক দেন। তালাকের পর রতনা তার বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার রুইতনপুর গ্রামে এবং নাসরুল্লাহ ঢাকায় চলে যান। এরপর রতনার ডাকে ঢাকা থেকে নাসরুল্লাহ প্রায়ই রুইতনপুর আসা-যাওয়া করতে থাকেন। নাসরুল্লাহকে বিয়ের প্রস্তাব দেন রতনা। বিষয়টি বুঝতে পেরে রতনার সঙ্গে স্বামী শরীফ যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। দুজনে আবারও বিয়ে করতে সম্মত হন। এদিকে নাসরুল্লাহকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে রতনাকে দিয়ে টোপ ফেলেন শরীফ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে নাসরুল্লাহকে এলাকায় ডেকে নেন রতনা। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যার পর দামুড়হুদা আখ সেন্টারের কাছে দেখা করতে বলেন। নাসরুল্লাহ সেখানে এলে শরীফ উদ্দিন এবং তার দুই ছেলে নাসরুল্লাহর সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন এবং এক পর্যায়ে তারা নাসরুল্লাহকে চলন্ত ট্রাকের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। নাসরুল্লাহর মৃত্যুর ১৫ দিন পর স্কুলশিক্ষক শরীফ উদ্দিন তালাক দেয়া স্ত্রী রতনাকে আবারও বিয়ে করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নাসরুল্লাহর পিতা মমজেদ আলী বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার আদালতে তারা মামলা করবেন। এদিকে নাসরুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার স্বজনদের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শরীফ উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে তার পরিবারের সদস্যরা অহেতুক হয়রানি করছে। নাসরুল্লাহর মৃত্যু স্রেফ দুর্ঘটনাজনিত। নাসরুল্লাহ যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, তা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনেই প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে যে ট্রাকে পিষ্ট হয়ে নাসরুল্লাহ মারা যান, সেই ট্রাকের চালক শিহাব হোসেন মোবাইলফোনে বলেন, ঘটনার দিন ট্রাক চালিয়ে দামুড়হুদা থেকে চুয়াডাঙ্গা আসছিলেন তিনি। পথে পুরো রাস্তা ফাঁকা দেখা গেলেও ঘটনাস্থল ব্র্যাক মোড়ের কাছে হঠাৎ একটি লোক ট্রাকের সামনে চলে আসেন এবং ঘটনাস্থলেই তার ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান। শিহাব বলেন, ঘটনার পর দামুড়হুদা মডেল থানা-পুলিশ ট্রাকসহ তাকে আটক করে। তবে নিহত নাসরুল্লাহর পরিবার ওই সময় মামলা না করায় তিন দিন পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More