।। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।।
আজ একুশ রমজান। আজ অতিবাহিত হচ্ছে এতেকাফের প্রথম দিন। ইতিপূর্বে এই কলামে এতেকাফের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছিলো। আজ এতেকাফের কিছু সূক্ষ বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হবে। এতেকাফের আসল উদ্দেশ্য হলো শবে কদরের তালাশে মহান আল্লাহর দরবারে সার্বক্ষণিক পড়ে থাকা, ক্ষণিকের জন্য হলেও পৃথক না থাকা। এই কারণে শুধুমাত্র প্রসব-পায়খানা ও ফরজ গোসল ছাড়া অন্য কোনো কারণে মসজিদের বাইরে গেলে এতেকাফ ছুটে যায়। এতেকাফ আমাদের জন্য বছরে একবার এই সুযোগ করে দেয় যে দুনিয়ার মায়ামহ ত্যাগ করে মসজিদে পড়ে থেকে নাছোড়বান্দা হয়ে একান্তভাবে মাওলাকে ডাকা যায়। পাঠক, ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। এমন সময় একজন ফকির আপনার পা জড়িয়ে ধরে নাছোড়বান্দা হয়ে বার বার পাঁচ টাকা চাচ্ছে। তাহলে আপনি কি করবেন? প্রথমদিকে না চাইলেও, তার বারবার পিঁড়াপিড়ির কারণে তাকে আপনি নিশ্চয়ই এক সময় তা দিয়ে দিবেন। এতেকাফের ব্যাপারটাও অনেকটা অনুরুপ। একজন এতেশাফকারী যেন প্রকান্তরে বলতে থাকে, হে আল্লাহ আমি দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে তোমার দরবারে এসে পড়ে আছি, যতক্ষণ তুমি আমার ফরিয়াদ না মনজুর করবে, আমাকে ক্ষমা না করবে, ততক্ষণ আমি এখান থেকে যাবো না। আল্লাহর ঘর মসজিদে বসে কেউ যদি বার বার এমনভাবে চাইতে থাকে তাহলে মহান আল্লাহতায়ালাও তাকে অবশ্যই মাফ করে দিবেন এবং শবে কদরের সমুদয় বরকত দান করবেন। পুরুষরা যেমন এতেকাফ করেন, ঠিক তেমনি নারীরাও এতেকাফ করতে পারেন। তবে নারীদের জন্য বাড়িতে বসে এতেকাফ করাই উত্তম এবং মসজিদে এতেকাফ করা মাকরুহে তাহরীমী অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি। নারীদের এতেকাফ পুরুষের এতেকাফের চেয়ে সহজ। তারা শুধু ঘরের একটি নির্দিষ্ট জায়গাকে পর্দা দ্বারা ঘিরে এতেকাফের জন্য ঠিক করবেন এবং এতেকাফের নিয়ত করবেন। দরকার হলে তিনি এতেকাফে বসেই কারো দ্বারা ঘরের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করায়ে নিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন। যে কোন মসজিদে যেখানে নিয়মিত জামাত হয় সেখানেই এতেকাফ করা যায়। হাদিসের বর্ণনা মতে নবী করীম (সঃ) হায়াতের শেষ পর্যন্ত নিয়মিত শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন এবং তার ওফাতের পর তার পবিত্র স্ত্রীগণও এতেকাফ করেছেন (বুখারী, মুসলিম)। তবে সুন্নত মোয়াক্কাদাহ এতেকাফ হলো শেষ দশ দিন। অর্থাৎ মহল্লার পক্ষ থেকে যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতেকাফ করে তাহলে ঐ মহল্লার সবার জিম্মাদারী আদায় হয়ে যাবে। আর যদি মহল্লার কেহই এতেকাফ না করে তাহলে সবাই গোনাহগার হবে। আমরা অনেক সময় এতেকাফে বসে দুনিয়ার আজে বাজে গল্পে লিপ্ত হই। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এতে এতেকাফের ফয়েজ-বরকত নষ্ট হয়ে যায়। এতকাফের সময়টুকু নফল নামাজ, কাজা নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আযকারসহ অন্যান্য ইবাদতে লিপ্ত থাকা উচিত।
(লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ