ইসিতে দুই চিঠি: কাল জরুরি সভায় বসছে নির্বাচন কমিশন

করোনাভাইরাস উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় এখনই ভোট নয়
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস সংক্রণের উচ্চঝুঁকিতে থাকা এলাকগুলোয় এখনই ভোটগ্রহণের বিপক্ষে মত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পৃথক চিঠি দিয়ে এ মত দেওয়া হয়। সংক্রমণ কমার পর ভোটগ্রহণ করতে কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে দুই চিঠিতে। সোমবার চিঠি ইসিতে পৌঁছায়। চিঠিতে কয়েকটি জেলা ও উপজেলার সংক্রমণের হার তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে চিঠি পাওয়ার পরই কমিশনের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ওই সভায় তফসিল ঘোষিত সিলেট-৩, ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও লক্ষ্মীপুর-২ এবং প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১১টি পৌরসভার ভোটের বিষয়ে আলোচনার জন্য অ্যাজেন্ডা রাখা হয়েছে। ওই সভায় নির্বাচনি কার্যক্রম চলবে নাকি স্থগিত করা হবে-সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম যুগান্তরকে বলেন, ‘কমিশন সভা ডাকা হয়েছে। সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি আলোচনা হতে পারে। যশোর, সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ভালো না। এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ ও মাঠপ্রশাসনের চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখনো চিঠি পাইনি। ইসি সচিবালয়ে আসতে পারে। এ কারণে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের চিঠি পেয়েছি। ১০ জুন কমিশনের ৮২তম সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে চিঠি দুইটিও উপস্থাপন করা হবে। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
সূত্র আরও জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বরাত দিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তারিখ পেছাতে অনুরোধ জানিয়ে ইসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার উল্লেখ করে ভোট পেছানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। এর বাইরেও কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসকরা নির্বাচন পেছাতে ইসিকে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানান। এছাড়া সরকারের উচ্চমহল থেকেও ইসিকে একই ধরনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে কমিশনের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত চেয়ে নথি উপস্থাপন করে ইসি সচিবালয়। পরে সেটি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ইসির জরুরি বৈঠকে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় আসন, প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ষষ্ঠ ধাপের ১১টি পৌরসভাসহ বেশকিছু স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানে ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারিত ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ায় ‘জনসমাগম এড়ানো’র কারণ দেখিয়ে ১ এপ্রিল ওইসব নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। ২ জুন লকডাউন চলাবস্থায় কমিশন এসব নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ২১ জুন নির্ধারণ করে। একই দিন সিলেট-৩, ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ আসনের তফসিল ঘোষণা করে। ১৪ জুলাই এসব আসনে ভোটের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা, নাটোর ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় লকডাউন চলছে। সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন রয়েছে। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন করা হয়েছিল। লকডাউনের কারণে ভোটের প্রস্তুতি ও প্রার্থীদের প্রচার বিঘ্ন ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে ৬ জুন মাঠপর্যায়ে এক চিঠি পাঠিয়ে সেটিতে নির্বাচনি কার্যক্রম লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। একই ধরনের নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আধাসরকারি পত্র দেওয়া হয়। এর পরদিনই (৭ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার পৃথক চিঠি দিয়ে ভোটের তারিখ পেছানোর অনুরোধ জানালেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে আইইডিসিআরের বরাত দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন জেলার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশের ৭ নম্বরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে সংক্রমণের অনুকূল পরিস্থিতিতে আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার জেলাভিত্তিক সংক্রমণের হার তুলে ধরেন। তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ সাতক্ষীরায় ৪৮ দশমিক ৩, বাগেরহাটে ৩৬ দশমিক ৩৯ ও যশোরে ২৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এই তিন জেলার স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো স্থগিত করে সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর ভোটের তারিখ নির্ধারণের অনুরোধ জানান তিনি। ২১ জুন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১০টি ও তালায় ১১টিসহ মোট ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। একই দিন বাগেরহাট জেলার মোংলায় ৬টি, মোরেলগঞ্জে ১৫টি, ফকিরহাটে ৭টি ও শরণখোলা উপজেলায় ৪টিসহ মোট ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের তারিখ রয়েছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলা নির্বাচনও ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ভোটগ্রহণ নিয়ে কমিশনার মধ্যেই দুই ধরনের অবস্থান রয়েছে। সর্বশেষ ২ জুন অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাহাদাত হোসেন চৌধুরী এখনই ভোটগ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নেন। ওই বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার প্রস্তাবে সমর্থন দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কবিতা খানম। এর আগে ১৯ ও ২৪ মে অনুষ্ঠিত কমিশনের দুটি সভায় বেশির ভাগ কমিশনার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাজশাহী, কক্সবাজার, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, সাতক্ষীরা, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ফরিদপুর, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট, ফেনী, গোপালগঞ্জ ও মেহেরপুর জেলাকে উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকি হিসাবে বিবেচনা করছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচন রয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More