ইসির সংলাপের চিঠি ঘিরে নানা গুঞ্জন : সাড়া দেবে না বিএনপি

বিএনপিকে চিঠি দেয়ার সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই : সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে লম্বা সময় ধরে আন্দোলন কর্মসূচিতে ব্যস্ত বিএনপি। এর মধ্যেই দলীয় সরকারের অধীনে দুটি সংসদ নির্বাচনে সংখ্যগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও একইভাবে হবে এমনটা স্পষ্ট করে বলছেন দলটির নেতারা। অন্যদিকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে অনড় বিএনপি। এমন মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে এবারও নির্বাচনের প্রাক্কালে সংলাপের আলোচনা তুঙ্গে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনায় বসার আহ্বানের পর এ নিয়ে রাজনীতির ভেতরে-বাইরে নানা কথাবার্তা চলছে। মঙ্গলবার বিকেলে স্থায়ী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ইসির বিষয়ে নতুন করে আর কী সিদ্ধান্ত হবে। যা বলার তো আগেই বলা হয়েছে। বাকিটা কাল হয়তো জানতে পারবেন।’ অবশ্য চিঠি পাওয়ার পরই বিএনপির তরফ থেকে ইসির সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেই বলে বক্তব্য দেয়া হয়। প্রশ্ন তোলা হয়, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট করতে ইসির সক্ষমতা নিয়েও।

এদিকে, বিএনপিকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সংলাপ একটি আনুষ্ঠানিক বিষয়। আমরা তাদেরকে (বিএনপি) সংলাপে ডাকিনি। তবে চিঠির মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে।’ গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপিকে চিঠি দেয়ার সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা বা সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে দেখলাম অনেকে লিখেছেন, বিএনপিকে চিঠি দেয়া সরকারের কূটকৌশল। তবে আমি বলছি, বিএনপিকে চিঠি দেয়ার পেছনে সরকারের কোনো কূটকৌশল নেই। বরং এটা ইসির কূটকৌশল হতে পারে। সরকার ইসির ওপর চাপ দিলে যে দেবে যাবে, বিষয়টি তেমন নয়। এখানে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনো কাজ নির্বাচন কমিশন করে না।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়। সেজন্যই ডেকেছি, অনানুষ্ঠানিকভাবে ডেকেছি। কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপেও বিএনপিকে ডাকা হয়নি। সব নির্বাচন কমিশনার বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি আরো জানান, গাইবান্ধায় ভোট বন্ধের ইস্যুতে ১৩৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারও পদক্ষেপ নেবে ইসি।

বিএনপি বলেছে, এই আমন্ত্রণপত্র দেয়ার বিষয়টি সরকার ও ইসির নাটক। আলোচনা যদি হতেই হয়, তাহলে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই হতে পারে। এই বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা বিএনপির তরফ থেকে কোনো চিঠি পাইনি। সেটা হয়তো আপনাদের বলেছেন। আমি যেহেতু চিঠি দিয়েছি, যে কোনো সাড়া আমাকে চিঠির মাধ্যমেই পেতে হবে। আমি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি পত্র দিয়েছি। তাই তাদের যে কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে যদি পত্রের মাধ্যমে আসে, সেটিই কাক্সিক্ষত।’ আলোচনা কী নিয়ে হবে, তাদের দাবি তো একটাই নির্বাচনকালীন সরকার এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই আইনসচিব বলেন, ‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে চাইছি না। কথা হচ্ছে, বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওনারা যদি আসেন, কী আলোচনা করব, সেটা সময়ই বলে দেবে। আলোচনার মধ্যেই ফুটে উঠবে ওনারা কী বললেন, আমরা কী বলব। আগাম কোনো বক্তব্য বা আগাম কোনো ধারণাও আমি দিতে পারছি না।’

এর মধ্যেই বৈঠক করে ইসির সংলাপের চিঠির বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বিএনপি। এদিকে সরকারের ইশারায় ইসি চিঠি দিয়েছে এমন আলোচনাও আছে বিএনপির ভেতরে। আবার বড় দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইসির চিঠির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে কি না সে সন্দেহও আছে কারও মধ্যে। বিএনপির একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন সুন্দর ভাষায় বিএনপিকে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়েছে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। নিশ্চয়ই কোনো পক্ষের চাপ আছে।’ যদিও মঙ্গলবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল চাপের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য কূটনৈতিক মহলের কোনো চাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘চাপের কথা যেটা বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা। কতক্ষণ পরপর চাপ দেবে, আমরা দেবে যাব, এটা হওয়ার কথা নয়।’ চিঠির পেছনে সরকারের কূটকৌশল নেই বলেও স্পষ্ট করেন সিইসি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানায় ইসি। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির নেয়া সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে সংলাপ নিয়ে ইসির এই উদ্যোগও বিফলে যাবে এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More