এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৬ নভেম্বর : ৪২ দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ৬ নভেম্বর থেকে সারা দেশে একযোগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ পরীক্ষা ঘিরে প্রশ্ন ফাঁস এড়াতে এবং নকলমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা আয়োজনে আগামী ৩রা নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ নির্দেশনা দেন। বলেন, চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৬ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ১৩ ডিসেম্বর। ১৫ই ডিসেম্বর ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হবে ২২ ডিসেম্বর। চলতি বছরের পরীক্ষা পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। এইচএসসিতে এবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। এই বিষয়ের নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দেয়া হবে।

মন্ত্রী জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছরের পরীক্ষার্থী কমেছে এক লাখ ৯৬ হাজার ২৮৩ জন। গত বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন। এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। এবার মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন এবং ছাত্রী সংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ২ হাজার ৬৪৯টি, মোট প্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ১৮১টি। গত বছরের তুলনায় কেন্দ্র বেড়েছে ২৮টি, প্রতিষ্ঠান কমেছে ২টি। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৩ জন শিক্ষার্থী। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৯৪ হাজার ৭৬৩ জন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি বিএম, ভোকেশনাল এবং ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ২২ হাজার ৯৩১ জন পরীক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ডা. দীপু মনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্লাসের পাঠদান বন্ধ থাকায় পেছনের কয়েকটি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়া হয়েছে। সে কারণে পাশের হার বেড়ে যায় বলে অনিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। এজন্য এবার প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। এবারে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৬৪৭টি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৫২৮টি কেন্দ্রে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৮২ হাজার ১৮৩ জন ছাত্র এবং ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৩০ জন ছাত্রী রয়েছে। তার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২ লাখ ৪০ হাজার ৫০৬ জন, মানবিক বিভাগে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৩৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ২ হাজার ৬৭৮টি প্রতিষ্ঠানে ৪৪৮টি কেন্দ্রে ৯৪ হাজার ৭৬৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৫১ হাজার ৬৯৫ জন ছাত্র এবং ৪৩ হাজার ৬৮ জন ছাত্রী রয়েছে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১ হাজার ৮৫৬টি প্রতিষ্ঠানে ৬৭৩টি কেন্দ্রে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৩১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ৮৮ হাজার ৯১৮ জন ছাত্র এবং ৩৪১৩ জন ছাত্রী রয়েছেন।

দেশের বাইরে ৮টি স্থানে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তার মধ্যে জেদ্দায় ৫১ জন, রিয়াদে ২০ জন, ত্রিপলীতে ৪ জন, দোহায় ৬২ জন, আবুধাবিতে ২৭ জন, দুবাইয়ে ২১ জন, বাহরাইনে ১৫ জন এবং সাহাম, ওমানে ২২ জন মিলে মোট ২২২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএস’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। অভিভাবকদেরও সামাজিক দূরত্ব রেখে চলাফেরার অনুরোধ করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে।

পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষকের ছয়টি নির্দেশনা উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়- (১) পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে এর পরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ঐদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে। (২) পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট পূর্বে এসএমএস’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। (৩) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন (তবে ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন)। (৪) পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ (যেমন পরীক্ষার্থী, কক্ষ পর্যবেক্ষক, মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, বোর্ডের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পরিদর্শন টিম, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ব্যতীত) অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। (৫) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে/সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে ও (৬) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের অনুরোধ করা হলো।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও গত বছর করোনা মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এ অবস্থায় গত বছর প্রায় ৯ মাস পিছিয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি আর ডিসেম্বরের শুরুতে নেয়া হয় এইচএসসি পরীক্ষা। তবে এ বছর করোনার পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More