টিকটকে পাচার হওয়া নদী এখন শীর্ষ পাচারকারী

স্টাফ রিপোর্টার: টিকটকে পাচার হওয়া নদী এখন শীর্ষ পাচারকারী। পাচার হওয়া এ নারীই এক সময় হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের বাংলাদেশ অঞ্চলের সমন্বয়ক। ভারত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পর্যন্ত তার জাল বিস্তৃত। পাচার করার পর মেয়েদের তদারকি করতে প্রায়ই বিদেশ ভ্রমণ করে নদী। পঞ্চম শ্রেণি পাস হলেও বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী এ নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ভারতে গ্রেফতার টিকটক হৃদয়, বাবুসহ মানবপাচার চক্রের সদস্যদের। এক ডজন নামধারী এ নারীকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মানব পাচার পরিচয় লুকাতে নিজেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে তুলে ধরে নদী। দেশ-বিদেশে তথাকথিত নৃত্য পরিবেশন করে নদী। ভিডিও ফ্ল্যাটফরম টিকটকেও রয়েছে নদীর সরব উপস্থিতি। ২০১৫ সালে পাচার হয়ে মালয়েশিয়া যায় নদী। চড়াই-উতরাইয়ের একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের সঙ্গে হাত মেলায় নদী। ২৮ বছর বয়েসী নদীর জালে আটকা পড়ে ভারত, মালয়েশিয়া, দুবাইয়ে পাচার হয়েছে বহু শহুরে দরিদ্র কিশোরী ও তরুণী। এরপর তাদের যৌনকর্মে বাধ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পাচারকারীরা। পাচার হওয়া মেয়েদের দেখভাল করতে প্রায়ই বিদেশ যেত নদী। বিভিন্ন ভাষায় দ্রুতই পারদর্শী হয়ে ওঠে নদী। ফলে পাচার চক্রে নদীর অবস্থান দ্রুতই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দায়িত্ব পান আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের বাংলাদেশের সমন্বয়কের। সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হলে তদন্তে নামে দুই দেশের পুলিশ। ভারতে গ্রেফতার হয়েছে ১১ বাংলাদেশি ও এক ভারতীয়। এর মধ্যে ১০ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছে ১৩ মানব পাচারকারী। এর মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ডিএমপির হাতিরঝিল থানায় এ পর্যন্ত সর্বমোট পাঁচটি মানব পাচার মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভারতে গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে নদীর। মুন্সীগঞ্জের মেয়ে নদীর এক ডজন নাম রয়েছে। ভারতে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বাগিয়েছে আধার কার্ড। পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে দেশেই আত্মগোপনে ছিল নদী। তাদের ধরতে সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সফলতাও আসে। গতকাল যশোর ও নড়াইল সীমান্ত এলাকা থেকে নদীসহ সাত পাচারকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভারতে পাচার হওয়ার পর যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ১৮ বছরের বিউটি (ছদ্মনাম) বুঝতে পারেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু, এরপরও তার ওপর নিপীড়ন বন্ধ রাখেনি পাচারকারীরা। সৌভাগ্যবশত, গত ২ মে ব্যাঙ্গালুরুর একটি ম্যাসাজ পারলারের জানালা ভেঙে পালাতে সক্ষম হন তিনি। এরপর ট্রেনে কলকাতা হয়ে ৬ মে যশোর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অন্য নারীদের মতোই ফাঁদে পড়েছিলেন বিউটি। পাচারকারীরা তাকে ভারতে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু, সেখানে যাওয়ার পর বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে বিভিন্ন হোটেলে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাকে।
দেশে ফিরে ঢাকায় নিজ বাড়িতে পৌঁছার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন বিউটি। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা বলেন, তার গর্ভের সন্তান আর বেঁচে নেই। একটি অস্ত্রোপচারের দরকার হবে তার। বিউটির বড় বোন ও খালাকেও গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ভারতে পাচার করেন নদী এবং টিকটক হৃদয়। তবে পাচার হওয়া এ দুজন এখন কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, নদী নামে যে মেয়েটির নাম আমরা জেনেছি সে ভারত, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন জায়গায় নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। নদী আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী দলের বাংলাদেশের সমন্বয় হিসেবে কাজ করে। সে একাধারে বাংলা, ইংরেজি, মালয়, হিন্দি, আরবি ভাষায় কথা বলতে পারে। ভারতে গ্রেফতার হৃদয় বাবু, সাগর, আল আমিন, সবুজ বাবু এদের সঙ্গে নদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গতকাল যশোর ও নড়াইল সীমান্ত এলাকা থেকে নদীসহ সাত পাচারকারী গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More