দেশের যে ৭ হাসপাতালে চলবে করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল

চীনের তৈরি ভ্যাকসিন বা টিকা কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর তা জানার জন্য বাংলাদেশের ৭টি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) পরিচালিত এ ট্রায়াল দেশের ৭টি হাসপাতালের ২ হাজার ১শ মানুষের ওপর চালানো হবে। আর এটি চালানো হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর।
ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হিসেবে যেসব হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো-মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিট-১, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতাল। রোববার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) পরিচালক মাহমুদ উজ জাহান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অনুমতিপত্রে আইসিডিডিআরবি সাতটি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করেছে জানিয়ে বিএমআরসির পরিচালক বলেন, ‘ওই সাতটি হাসপাতালের যাদের ওপর ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে তাদের তালিকা করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে। নাম দেয়া সাতটি প্রতিষ্ঠানই সরকারি হাসপাতাল। ভ্যাকসিনটি সুস্থ মানুষেরে ওপর প্রয়োগ করা হবে। আপাতত স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ট্রায়াল চালানো হবে। চীনের সিনোভেক রিসার্চ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করবে তারা। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) রোববার ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনটি চীনের তৈরি। ওই ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল হবে বাংলাদেশে। এক মাস আগে বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ ইথিকস কমিটির কাছে আবেদন করেছিল আইসিডিডিআর,বি। সেই ট্রায়ালটা তারা আগামীতে সম্পন্ন করবেন। তারা কেবল অনুমতি নিয়েছে। এরপর আরো অনেক প্রক্রিয়া আছে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়ে।’ বিএমআরসির পরিচালক মাহমুদ উজ জাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনের সিনোভেক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির তৈরি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআরবি আমাদের কাছে প্রটোকল জমা দিয়েছিলে। ন্যাশনাল রিসার্চ এথিকস কমিটি নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে। কমিটি এর নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে। এখন তারা যেসব প্রতিষ্ঠানে এই পরীক্ষা করবে, তাদের প্রশাসনিক অনুমোদন নেবে।’
মাহমুদ উজ জাহান জানান, বিএমআরসির কাছে আইসিডিডিআরবির পক্ষ থেকে যে প্রটোকল দেওয়া হয়েছে, তাতে ৪ হাজার ২০০ জনের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে। তবে ৪ হাজার ২০০ জন টিকা পাবেন না। এঁদের মধ্যে অর্ধেক টিকা পাবেন, অর্ধেক পাবেন না। এটাই গবেষণার নিয়ম।
আইসিডিডিআরবি দেশের সাতটি হাসপাতালে টিকা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে অনুমোদন চেয়েছে বলে জানান বিএমআরসির পরিচালক। অধিদপ্তর অনুমোদন দিলে এসব হাসপাতালে পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানান বিএমআরসির পরিচালক।
মাহমুদ উজ জাহান জানান, যে সাতটি প্রতিষ্ঠানে টিকার পরীক্ষা হবে সেগুলো হলো সারা বিশ্বে করোনার টিকা বানাতে এখন অন্তত ১৬০টি উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি টিকার তৃতীয় ধাপে আছে। সিনোভেকের এ টিকার পাশে তৃতীয় ধাপে আছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা।
প্রসঙ্গত, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থানীয় কার্যালয় নতুন ভাইরাসের বিষয়ে ঘোষণা দেয় ৩১ ডিসেম্বর। ধারণা করা হয়, ভাইরাস প্রতিরোধে চীন শুরু থেকে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, তার মধ্যে টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টাও ছিল। সিনোভেক বায়োটেক এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনোভেকের টিকার সম্ভাব্য নাম ‘করোনাভেক’। টিকা ও ওষুধ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় মানুষের জন্য টিকা কতটা নিরাপদ, তা দেখা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় টিকা নির্দিষ্ট জীবাণু প্রতিরোধে কতটা কার্যকর, তা দেখা হয়। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা হয় টিকা কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More