নতুন স্বপ্নে পথ চলা : বিদায় একুশ স্বাগত আশা জাগানিয়া ২০২২

এ বছরেই খুলে যাবে আশা-আকাক্সক্ষার পদ্মা সেতু : মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ
স্টাফ রিপোর্টার: নদীর স্রোতের মতো মানুষের জীবন কখনও থেমে থাকে না। তমসা কেটে তেজদীপ্ততা ছেড়ে মলিন হয়ে শুক্রবার সূর্যাস্ত হয়েছে সূয্যিমামার। বিশ্বের বয়স বাড়ল আরও এক বছর। ‘করোনামুক্ত বিশ্ব’ দেখার প্রত্যাশার ঝাপি খুলে আজ শনিবার বিশ্বময় আশা জাগানিয়া যে নতুন সূর্যটি উঠেছে, সেটি নতুন বছরের। বিদায় বিষময় ২০২১, স্বাগত ২০২২ সাল।
দু’হাজার ২০ সালের মতো এবারও সূর্যাস্ত শেষে দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরেই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসাব নিয়ে পৃথিবীকে বিষময় করে বিদায় নিল আরও একটি আলোচিত ভয়াল বছর। তবে নতুন বছর বাঙালির জীবনে আসছে এক অন্যরকম প্রত্যাশা নিয়ে। কেননা এই নতুন বছরেই খুলে যাবে বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আবার এ বছরেই রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে মেট্টোরেল। কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেলের দুয়ারও খুলে যাবে এ বছর। বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ দাঁড়াবে নতুন মর্যাদা নিয়ে। গোটা বিশ্ব দেখবে বিস্ময়কর উন্নয়ন-অগ্রগতি ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো এক অন্যরকম বাংলাদেশকে। সমাপ্ত বছরেই বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। দেশের এই এগিয়ে যাওয়ার গল্পের প্রধান কারিগরই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও রেকর্ড চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা। অনাদিকাল থেকে সৌরজগতের নিখুঁত নিয়মে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। শীতের কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল রোদ। কিন্তু অন্য যে কোন দিনের চাইতে আজকের ভোরের আলো যেন বেশি মায়া মাখানো। যেন নতুন স্বপ্নের কথা বলছে। বলছে, সামনের দিনগুলোতে করোনাসহ সকল অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে দেশে, পৃথিবীময়। আশাজাগানিয়া সূর্যকিরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকের প্রাণে, মনে।
তবে সদ্য বিদায় নেয়া বছরকেও ভুলতে পারবে না বিশ্বের মানুষ। এই বছরটিও কেটেছে আতঙ্ক, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তায়। পুরো বছরটিই কেটেছে করোনাভাইরাসের মরণ-ভীতি। কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ, এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে ভ্যাকসিন, প্রয়োগও শুরু হয়েছে দেশে দেশে। বিশ্বের সব মানুষের এখন একটাই আশা- করোনা ঝড় মোকাবেলায় সক্ষম হোক মানুষ, পৃথিবী থেকে দূর হোক প্রাণঘাতী কোভিড-১৯। ২০২১-কে বিদায় জানাতে ভারাক্রান্ত হয়নি কোন মানুষের মন, কারণ একুশও যে বিষ ছড়িয়েছে আরও বেশি। তাই বিশ্বের মানুষ নতুন বছর ২০২২-কে স্বাগত জানিয়েছে নতুন আশায় বুক বেঁধে।
অশুভ শক্তির মিথ্যা বোধ, প্রজন্মের নষ্ট হয়ে যাওয়া মুখগুলোর আস্ফালনের অশুচি কাটিয়ে অস্তাচলে গেল যে সূর্যটি, আজ পূর্বদিগন্তে শাশ্বত সেই সূর্যেরই উদয় হয়েছে নতুন সৌন্দর্যের আবাহন ঘটিয়ে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে নবোদয় ঘটেছে এক নতুন প্রজন্মের- যে প্রজন্মের কাছে মায়ের মতো পবিত্র তার দেশ, সূর্যের মতো সত্য তার মুক্তিযুদ্ধ আর উন্নয়নের জ্যোতির মতোই দ্যুতি ছড়ানো তার ভবিষ্যত। তাই একাত্তরের মতোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অবিস্মরণীয় অগ্রযাত্রা আর স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তিকে আগের মতো বারবার পরাজিত করার দৃঢ় শপথে নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে দেশের মানুষ।
করোনার ভয়াল তান্ডব এখনও কমেনি। তবুও তমসা কেটে পূর্বদিগন্তে আবহমান সূর্য আবার শুরু করল নতুন যাত্রা। ‘সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না’- এই সত্যকে বিমূর্ত করে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ। মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর ২০২১। শুরু হলো নতুন বছর ২০২২। সুপ্রভাত বাংলাদেশ; স্বাগত ২০২২। হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২২। অভিবাদন নতুন সৌরবর্ষকে।
সেই একই সূর্য, একইভাবে উঠছে পূর্বাকাশ আলো করে। তবু তার উদয় ভিন্নতর। আজকের দিনটিও আলাদা, কারণ একটি নতুন বর্ষপরিক্রমা শুরু হলো আজ শনিবার থেকে। সোনালি স্বপ্নের হাতছানি নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। ভরা পৌষে কুয়াশার হিমেল চাদর ছিন্ন করে উদ্ভাসিত হলো সোনালি আলোর সকাল। কালপরিক্রমায় দ্বারোদ্ঘাটন হলো প্রকৃতির নতুন নিয়মে নতুন বৎসর ২০২২-এর। চেতনায় জাগ্রত আবহমান সেই মাঙ্গলিক বোধ- অতীতের জীর্ণতা অতিক্রান্ত দিনমাসপঞ্জির হিসাব থাক বিস্তৃতির কালগর্ভে, প্রত্যাশায় বুক বাঁধি নতুন দিনের সূর্যোলোকে- তবে উদ্ভাসন হোক সজীব-সবুজ নতুনতর সেই দিনের, যা মুছে দেবে অপ্রাপ্তির বেদনা; জাগাবে নতুন প্রত্যয়ে নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন আজ। আজ ২০২২ সালের প্রথম দিন। ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ, কষ্ট, করোনার ভয়-ভীতি সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন পৃথিবী করোনামুক্ত হয়, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। বিশ্ব থেকে বিতাড়িত হয় ঘাতক করোনাভাইরাস। আমাদের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত প্রিয় স্বদেশ আরও সমৃদ্ধির দিকে যেন এগিয়ে যেতে পারে।
একযুগ ধরেই চালকের আসনে শেখ হাসিনা: বিদায়ী বছরেও রাজনীতিতে চালকের আসনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু বিদায়ী বছর ২০২১ নয়, ক্ষমতার গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক। ইংরেজি নববর্ষের শুভলগ্নে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোধূলি বেলায় রক্তিম সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেছে ঘটনাবহুল ২০২১ সালটি। উদিত হয়েছে নতুন বছরের নতুন সূর্য। প্রত্যাশা কেবল মানুষের করোনামুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ, শান্তি, স্বস্তি, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ, শক্ত হাতে জঙ্গী-সন্ত্রাসী দমন এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ গড়ার। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আজ শনিবার থেকে যাত্রা শুরু হলো নতুন বছরের। স্বাগত ২০২২, বিদায় ২০২১।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More