পণ্যের কোনো ঘাটতি না থাকলেও অগ্নিমূল্যে অসহায় ক্রেতা : সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই

কারসাজি বন্ধে মাঠে প্রশাসন থাকলেও সুফল মিলছে না :  ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফায় পণ্যের দামে উত্তাপ

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে সেহরি ও ইফতারের জন্য পণ্য কিনতে অনেকেই ছুটছেন বাজারে। সেখানে পণ্যের কোনো ঘাটতি না থাকলেও অগ্নিমূল্যে অসহায় ক্রেতা। অনেকেই ফিরেছেন মলিন মখ নিয়ে। কারসাজি বন্ধে মাঠে প্রশাসন থাকলেও সুফল মিলছে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্রেতাদের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। মঙ্গলবার কাঁচাবাজারে সরেজমিন ঘুরে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাজারে বাড়ানো হয়েছে পণ্যের জোগান। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-পণ্যের আমদানি ও মজুত পরিস্থিতিও চাহিদার চেয়ে বেশি। তারপরও রোজা ঘিরে কারসাজি করে দুই মাস আগেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কিছু পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের তরফ থেকে নীতি সহায়তায় ছাড় দেয়া হয়েছে। বাজার তদারকিতে মাঠে কাজ করছে সরকারি ১৪টি সংস্থা। তারা নিয়মিত তদারকি অভিযান পরিচালনা করছে। অনিয়ম পেলেই সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এতসব উদ্যোগের পরও সুফল মিলছে না বাজারে। নিয়ন্ত্রণে আসছে না পণ্যের দাম। বৃহস্পতি বা শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হওয়ার কথা। ফলে স্বাভাবিক কারণেই ভোক্তাদের একটি বড় অংশ এখন থেকেই রমজানের বাজার শুরু করেছে। ফলে আগামী কয়েকদিন বাজারগুলোতে রোজানির্ভর পণ্য কেনার চাপ থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বাজারে ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে।

বাজারে পণ্য কিনতে এসেছেন মোস্তফা ও সায়মা বেগম দম্পতি। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বাজারে এসে মুখটা মলিন হয়ে গেছে। গত বছর যেখানে ৭৫-৮০ টাকা দিয়ে ছোলা কিনেছি, এবার ৯৫-১০০ টাকা দাম চাচ্ছে। গত বছর ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিকেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা। মসুর ডাল কিনতে কেজিতে গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা। যা গত বছর রোজার আগে ১৩০ টাকা ছিল। আর সয়াবিন তেলের দামেও আগুন। প্রতিলিটার কিনতে হয়েছে ১৮৫ টাকা। যা আগে প্রায় ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমন যদি অবস্থা হয় তাহলে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? বাজারে এক প্রকারের নৈরাজ্য চলছে, দেখার যেন কেউ নেই। কথা হয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুক্রবার যদি দাম বেড়ে যায় এমন শঙ্কায় আগেভাগে রমজান মাসের জন্য বাজারে এসেছি। কিন্তু দোকানে গিয়ে দাম শুনে চোখ আকাশে উঠে গেছে। ৬০ টাকা কেজির মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। বেসন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকা ছিল। ডাবলি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগেও ৪৫-৫০ টাকা ছিল। প্রতিলিটার সরিষা তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা আগে ২৭০ টাকা ছিল। এমন যদি হয় অবস্থা তাহলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু থাকে না।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বেশ কিছু কারণে এবারের নিত্যপণ্যের দাম একটু বেশি। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি ও ডলারের দাম বাড়তি, আমদানি পণ্যে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। এ কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা করার প্রবণতায় পণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এসব দেখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগও নিয়েছে। তবে সুফল নেই। সব মিলে এবারের রমজানে পণ্য কিনতে ক্রেতার বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে ক্রেতার একটু হলেও স্বস্তি মিলবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজানকে পুঁজি করে কেউ যাতে অতিমুনাফা করে ভোক্তাকে ঠকাতে না পারে সেজন্য সরকারের তদারকি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকি প্রয়োজনে জেলে পাঠানো হতে পারে।

তিনি জানান, রমজান সামনে রেখে বাজার সামাল দিতে সরকার এখন আরও সক্রিয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিংয়ে সরকারের অনেক সংস্থা মাঠে নেমেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, শিল্প মন্ত্রণালয়, র্যা বের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক মনিটরিং টিম। পাশাপাশি এই কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধি এবং ক্যাব সদস্যরাও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More