প্রস্তুতির ভাটায় ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশ ভ্রমণ কিংবা যাতায়াত করেননি এমন ব্যক্তির দেহেও ধরনটি শনাক্ত হচ্ছে। ওমিক্রনসহ সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এত কিছুর পরও প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পূর্ব প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভাটার কারণে এখন নানা উদ্যোগেও ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। প্রাণ সংহারি ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, গতকাল পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ৬২ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। যাদের অর্ধেকের বেশি মানুষের বিদেশ গমনের ইতিহাস নেই। পাশাপাশি সংক্রমণ ঢাকার বাইরেও ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ শনাক্ত ৮ জনই চট্টগ্রামের। এর আগে রোববার যশোরে তিনজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ওমিক্রনের বিস্তার নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির দেওয়া তথ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফলে নতুন ধরনটির দাপট আঁচ করতে পারলেও এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ধাপ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও সর্বত্র কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে আসার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু এটা তেমন কেউ মানছে না। গণজমায়েতও বন্ধ নেই। সরকার এগারো দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে। এগুলো প্রায় সর্বত্রই উপেক্ষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি বা নির্দেশনা প্রতিপালনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আরও কঠোর হলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিদরা। এখন সংক্রমণ যে অবস্থায় গেছে তাতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। সতর্ক না হলে আগামীতে আরও খারাপ হতে পারে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে যাতায়াতের ইতিহাস না থাকা এবং ঢাকার বাইরে রোগী শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাই এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, জার্মানভিত্তিক একটি সংস্থার হিসাবে দেশে এই মুহূর্তে ওমিক্রন আক্রান্ত মোট রোগী ৬২ জন। আক্রান্তদের ৬৯ শতাংশ ঢাকায় শনাক্ত হওয়া রোগী। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৮৮৮ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে কত শতাংশ ওমিক্রন তা জানা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিষ্কার কিছু বলছে না। আবার ধরনটি শনাক্তে ব্যাপকভিত্তিতে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার দরকার হলে স্বাস্থ্য বিভাগের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে সরকারে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘ওমিক্রনে দৈনিক কতজন আক্রান্ত, কতজন মারা গেলেন সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না। এছাড়া পুরুষ ও নারী কতজন আক্রান্ত সে তথ্যও দেওয়া সম্ভব নয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তে ওমিক্রন নিয়ে না ভেবে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ সংক্রমণশীল ধরনটি আজ ১০ শতাংশ, কাল বেড়ে ১৫ শতাংশ হবে আবার পরশু তা কমে ৫ শতাংশে আসতে পারে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। ডেল্টার ক্ষেত্রেও তাই। এভাবে আলফা, বিটা ধরন আসছিল সেটা চলে গেছে, আবার আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ধরনটি দ্রুত পরিবর্তনশীল। সুতরাং বিষয়গুলোকে এত বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ওমিক্রনের উপস্থিতি যে বাংলাদেশে আছে সেটা নিশ্চিত। সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। ধরনটি তাড়াতাড়ি ছড়ায়, আর যত বেশি ছড়াবে তত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রোগী বাড়তে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুও বাড়তে পারে। ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনে মৃত্যুহার কম। কিন্তু যাদের ইমিউনিটি সিস্টেম তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যাদের কোমরবিডিটি আছে, তাদের ক্ষেত্রে জটিল হতে পারে। ফলে এটা থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা উচিত।
এদিকে গত সোমবার ওমিক্রন ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগজনক প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা গেছে রাজধানীতে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের ৬৯ শতাংশের শরীরেই ওমিক্রনের উপস্থিতি রয়েছে। এটা শুধু ঢাকায় করা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরেও আমরা মনে করি একই অবস্থা হবে। এ কারণেই করোনা সংক্রমণ বেড়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ত আইইডিসিআরের একটা সোর্স থেকে এ কথা বলেছেন। ক্লিনিক্যালি ওমিক্রনের যে বিষয়গুলো বোঝা যায় তার মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যাক্তির মৃদু উপসর্গ বা আপার রেসপেরিটরি ইনফেকশন থাকে। ফলে বেশি সংখ্যক নমুনা নিয়ে কাজ না করলে বলা কঠিন কোন ধরনটি বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তাছাড়া জিনোম সিকোয়েন্স সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। এটা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। রোগী শনাক্তে দৈনিক কতটি নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, কতজনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় সে ব্যাপারে আইইডিসিআর ভালো বলতে পারবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More