মাঙ্কিপক্স রোধে সতর্কতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার: ইতোমধ্যে বিশ্বের ২৩টি দেশে মাঙ্কিপক্স পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও এই রোগটি করোনাভাইরাসের মতো ভয়াবহ হবে না বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারপরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। মাঙ্কিপক্স যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েই নিজেদের কাজ সম্পূর্ণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। কিন্তু মাঙ্কিপক্স রোধে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, গায়ে যতক্ষণ জ্বলবসন্তের মতো গোটা উঠবে। সেটা জ্বলবসন্তের মতো দেখা গেলেও সাইজে কিছুটা বড় হবে। জ্বলবসন্তের গোটার ভেতরে থাকা রসগুলো পানির মতো হলেও মাঙ্কিপক্স হলে তা হবে সাদা রংয়ের। এই গোটাগুলো থেকে একটি গোটা ফুটো করে রস নিতে হবে টেস্ট করার জন্য। এর সঙ্গে নিতে হবে গোটাগুলোর পর্দার সোয়াপ। এগুলো নিয়ে পরে আরটিপিসিআর টেস্টের মতো টেস্ট করতে হবে। সেক্ষেত্রে বোঝা যাবে রোগীর মাঙ্কিপক্স হয়েছে কি না। তবে গায়ে জ্বর থাকলেই কারও মাঙ্কিপক্স হয়েছে এটা ধারণা করা যাবে না।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্স স্মলপক্সেরই একটি ধরন। ফলে তারা স্মলপক্সের টিকা নেয়ারই পরামর্শ দিয়েছেন। তবে যেহেতু টিকা অপ্রতুল, তাই সবাইকে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়নি। কেবলমাত্র যারা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি গেছেন তাদেরই টিকা নিতে হবে। বয়স্কদের জন্যও টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, মাঙ্কিপক্স ছোঁয়াচে। যৌনমিলনের ফলেও এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে। তবে করোনার মতো এটি কোনো প্যানডেমিক নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে এই রোগ নিয়ে অযথা উত্তেজনা ছড়ানোর প্রয়োজন নেই। গত কয়েক মাসে বিশ্বের প্রায় ২৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এখনই টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া যাবে না। বরং এটা প্রতিরোধ করতে কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এখনই আমরা কাউকে ভ্যাকসিন নিতে এডভাইস করব না। কারণ, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এটার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা বললে মানুষ অহেতুক চেষ্টা করবে ভ্যাকসিন নেয়ার। বরং কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

মাঙ্কিপক্স সম্পর্কে একটা গাইডলাইন তৈরি করা, বিমানবন্দরে কেস ডিটেকশন, ট্রেনিং দেয়া, ল্যাবরেটরি ডায়াগনোসিস, যদি কোনো রোগী আসে তার চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করা। এগুলো করতে পারলে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ছড়ানোর আশঙ্কা খুব কম বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত এটি মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করে। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে এ রোগ খুবই বিরল। এই ভাইরাসটি গুটিবসন্ত রোগের ভাইরাসের মতো একই গোত্রের। কিন্তু অনেক কম মারাত্মক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও কম।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. খন্দকার মাহমুদা জামিল বলেন, প্রাথমিকভাবে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এর জন্য অবশ্যই শরীরে রোগটি দেখা দিতে হবে। প্রথম দিকে শরীরে জ্বর হবে। এরপর মুখে-হাতে ও শরীরে দেখা দেবে জ্বলবসন্তের মতো গোটা। যদিও স্মলপক্স বা জ্বলবসন্ত উঠলে গোটাগুলোর মধ্যে যে রস থাকে সেগুলো পানির মতো হয় কিন্তু মাঙ্কিপক্স হলে তা পুরো শাদা হয়ে যাবে। আর মাঙ্কিপক্সগুলোর গোটা বেশ বড় হয় জ্বলবসন্তের মতো ছোট হয় না। তাই বলাই যায় প্রাথমিকভাবে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করতে আরটিপিসিআর দিয়ে টেস্ট করতে হয়। স্যাম্পল কালেকশন কিছুটা আলাদা এক্ষেত্রে। শরীরে যে গোটাগুলো ওঠে সেগুলোর থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য গোটা ফুটো করে ভেতর থেকে স্যাম্পল নিতে হবে। গোটার ওপরে চামড়ার প্রলেপ থেকেও স্যাম্পল নিতে হয়। কেউ যদি গোটা ফাটাতে না চায় তাহলে গোটাগুলো প্রয়োজনে সুই দিয়ে ফুটো করেও রস বের করা যেতে পারে। তবে গোটা ফাটিয়ে ভালোভাবে স্যাম্পল নেয়ায় উচিত। এতে জীবাণু ভালোভাবে শনাক্ত করা যায়।

তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা সঙ্গে করে এই ভাইরাস নিয়ে আসছেন কি না তা বোঝা কঠিন। তবে যেসব দেশে এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে সেখান থেকে যারা আসছেন তাদের নজরদারিতে রাখা যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে চার দিনের মধ্যেই পুরোপুরি দেখা দেয়া মাঙ্কিপক্স। এই সময়টাতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। যাদের সঙ্গে মিশেছেন তাদেরও আলাদা রাখতে হবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, আমাদের সন্দেহ হলেই তাকে আমরা ভালোভাবে স্ক্রিনিং করে তারপর ছাড়ি। আপনারা জানেন একজনের ক্ষেত্রে আমরা এই কাজটি করেছি। আপাতত বিশ্বে এর বাইরে আর কিছু করার নেই। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যারা আসছেন তাদের একটু বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। শরীর কিছুটা গরম থাকলেই বলা যাবে না তার মাঙ্কিপক্স হয়েছে। এমন গরম এমনিতেও অনেকের থাকে। প্রত্যেকটি ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশাসন আহমেদুল কবীর বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের নিয়ে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে। এখনো আমাদের হেলথ ডিক্লিয়ারেশন ব্যবস্থা চালু আছে। যারা আসছেন তাদের সবারই হেলথ ডিক্লিয়ারেশন দিয়ে আসতে হচ্ছে। এই রোগটি করোনার মতো করে ছড়ায়। তাই একই ধরন বলে হেলথ ডিক্লিয়ারেশনই যথেষ্ট। আপাতত আর কিছুর প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি। এই রোগটি আজকের না, বহু আগের।

তিনি আরও বলেন, এই রোগটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে ১৯৮২ সালে। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে। ওই অঞ্চলগুলোতেই বেশিরভাগ থাকতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আরও বেশ কিছু দেশে এবার ছড়িয়েছে। তবে এতে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। করোনার মতো এতটা ভয়ংকর নয় মাঙ্কিপক্স। এটা সেভাবে ছড়াতেও পারবে না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More