পুলিশ সদর দফতরে অপরাধ বিষয়কসভায় মাদক ও ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশের ৬৪ জেলায় মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্য ও মাদক কারবারিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা ডিজিটাইলাইজড করা হবে। কোন জেলায় কত পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত ও কতজন মাদককারবারি আছে তা কম্পিউটারে টিপলেই চলে আসবে তালিকাটি। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদস্যদের মধ্যে যে ডোপটেস্ট চালু করে মাদকাসক্তদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে তা পর্যায়ক্রমে সারাদেশের প্রতিটি পুলিশ ইউনিটে চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী দুই বছর আগে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে যে বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে তা আরও বেগবান করে মাদক নির্মূল করাই হচ্ছে এর উদ্দেশ্য। পুলিশ সদর দফতরসূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশের মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্য ও মাদক কারবারিদের তালিকা ডিজিটালাইজড করার জন্য ইতোমধ্যেই দেশের ৬৪ জেলার পুলিশের ইউনিটগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যে ২৬ সদস্যের ডোপটেস্ট করা হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে পুলিশের ডোপটেস্ট করার পরিকল্পনারই অংশ। যেসব পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে তাদের মাদকমুক্ত করে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হলে মাদককারবারি বিশেষ করে গডফাদার, মাফিয়া ডন এ শ্রেণির মাদক কারবারিরা ছাড় পাবে না বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
পুলিশ সদর দফতরসূত্রে জানা গেছে, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়। এরপর মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্য ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখা যায়নি। এখন নতুন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পুলিশ সদস্যদের মাদকমুক্ত ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাদক সেবন, মাদক কারবার, মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে যে বা যারাই যুক্ত থাকবে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তিদানের নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
পুলিশ সদর দফতরসূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দফতরে ত্রৈমাসিক যেসব অপরাধ বিষয়কসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে মাদক বাণিজ্য ও ঘুষ এ দুটি বিষয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন থানায় ওসি, এসআই, এএসআই পদায়নে রেঞ্জ ডিআইজিরা ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করেন এবং ঘুষের টাকা চেইন অব কমান্ডের মতোই পুলিশের ওপরের কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যায় বলে নিচের স্তরে যে অভিযোগ আকারে চালু আছে তা বন্ধের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ডিআইজিরা ওসি পদায়নে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা ও এসপিরা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করেন, যা তারা মাদক বিশেষ করে ইয়াবা বাণিজ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে ঘুষের টাকার যোগান দেন বলে অভিযোগ করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) সম্প্রতি এক থানার ওসি ৬০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়ার খবর পায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে এই খবর যাওয়ার পর পরই ওই থানার ওসিকে বদলি করাসহ ডিএমপি পুলিশের মধ্যে ব্যাপক রদবদল শুরু করেন। সর্বশেষ ডিএমপির ২৬ পুলিশ সদস্যদের ডোপটেস্ট করে ২৬ জনের পজেটিভ পাওয়ার এ ধরনের ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনের জন্য প্রথম, নজিরবিহীন ও বিরল। সরকারের সর্বোচ্চ মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
পুলিশ সদর দফতরসূত্রে জানা গেছে, শুধু পুলিশ সদস্য বা সাধারণ মাদক কারবারি বা মাদকাসক্তই নয়, মাদক বাণিজ্যে মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের গডফাদার তালিকাও স্থান পাবে নতুন তালিকায়। এমনকি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হবে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী। নির্দিষ্ট ওই ছকে থাকবে মাদক ব্যবসায়ী, তাদের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের নাম, পিতার নাম, তাদের রাজনৈতিক দলীয় ও প্রশাসনিক পরিচিতি। সারাদেশের ৬৪ জেলায় পুলিশের ইউনিট প্রধানরা এ তালিকা তৈরি করে নিজ ইউনিটের কাছে সংরক্ষণ ও পুলিশ সদর দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশের মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক গডফাদারদের তালিকা বিচ্ছিন্নভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কাছে আছে। সেই তালিকা থেকেও নতুন তালিকা তৈরিতে সাহায্য ও সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এরপর নতুন তালিকা ধরে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশব্যাপী ব্যাপক আকারে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।