একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা-বাবা

মহাকাশের অজানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেন সফ টোয়ার ইঞ্জিনিয়ার চুয়াডাঙ্গার ছেলে মুন্না

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীতে ডুবে মারা যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইনুর রহমান মুন্না ছিলেন মা-বাবার একমাত্র ছেলে। তাকে হারিয়ে পাগল প্রায় তারা। মুন্নার এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছেন না তারা। বারবার সিক্ত হয়ে উঠছে বাবা-মার চোখ। সন্তানের বিভিন্ন কাজ ও স্বপ্ন নিয়ে করছেন বিলাপ।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) প্রভাষক মুন্নার পরিবারের সদস্য চারজন। বাবা আব্দুল মমিন চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার।  মা মাহাবুব আরা মিতা গৃহিনী। ছোট বোন ফারহানা আফরোজ জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন মুন্না।  ছোট থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল তার।  ২০০৫ সালে উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। পরে ২০১১ সালে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পান। মুন্না।  ২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ প্লাস পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।

পরে ভর্তি পরীক্ষায় তিনি সুযোগ পান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে।  গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ও অর্থনীতিতে সুযোগ পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।   তবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আগ্রহ থাকায় ভর্তি হননি।  ২০১৪ সালে ভর্তি হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এআইইউবি) কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।  সেখানে ঘটে তার মেধা বিকাশ।  সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে ভাল ফলাফল অর্জন করায় তাকে ওই বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।

মৃত শিক্ষক মুন্নার বাবা আব্দুল মমিন জানান, মুন্না আমার খুব আদরের ছেলে।  সে নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিল।  গতকাল সকালে মায়ের সাথে খেয়ে পৌরসভায় ট্রেড লাইসেন্স করবে বাইরে বের হয়েছিল।  তারপর সে আর বাড়ি ফেরেনি।  সে সাঁতার জানতো না।  তার অপর দুই বন্ধুও সাঁতার জানতো না। অল্প পানিতে নেমে হঠাৎ তলিয়ে যায় সে।

মুন্নার বোন ফারহানা আফরোজ জানান, আমার ভাই নিজে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলেন। ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। তার ছিল লিডারশীপ মনোভাব। নিজে অন্যকে চাকুরি দেবে এটাই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি আরও জানান, তিনি মহাকাশের অজানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেন।  সে জন্য এস্ট্রোনমি বাংলা নামে ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলেন তিনি।  সবাই যেন খুব সহজে মহাকাশের অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে ও শিখতে পারে।  মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা যেন খুব সহজে শিখতে পারে। ওই দিন তার দুই বন্ধুকে নিয়ে নদীর তীরে বসে তার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তিনি।

মুন্নার মা মাহাবুব আরা মিতা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে ছিল সোনার টুকরা।  তার ছিল অনেক সুনাম।  কারও সাথে ঝগড়া বিবাদে জড়াতো না সে।  কিন্তু আমাকে কাঁদিয়ে চলে গেলে আমার ছেলে।

উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক মাইনুর রহমান মুন্না।  নিখোঁজের ৬ ঘন্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More