কারা আসছেন নতুন ইসিতে : সংলাপে বসছেন রাষ্ট্রপতি

আমন্ত্রণ পাচ্ছে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল পাবে না জামায়াত
স্টাফ রিপোর্টার: বিদায়ের পথে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মাত্র দুই মাস মেয়াদ আছে এই নির্বাচন কমিশনের। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। এরপরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। তবে কারা আসছেন নতুন ইসিতে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। নতুন নির্বাচন কমিশনারদের সম্ভাব্য তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাবেক আমলা, বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নাম। এদিকে বিগত সময়ের মতো এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আগামী জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সবার জন্য চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নিরপক্ষে নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন, যারা সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
নতুন ইসিতে কারা আসছেন? বিষয়টি নিয়ে সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকায় নতুন কমিশন কেমন হবে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। নতুন ইসি গঠনে আইন তৈরি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারও ইসি গঠন হবে। তবে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। গ্রাম-গঞ্জের চায়ের আড্ডার আলোচনায় এখন নির্বাচন কমিশন। কেননা চলমান ইউপি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক হওয়ায় নতুন ইসি গঠন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সম্ভাব্য তালিকায় সাবেক আমলা, বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। নতুন সিইসি হিসেবে কাকে নিয়োগ দেয়া হতে পারে এ তালিকায়ও উঠে এসেছে বেশ কয়েকজনের নাম। একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সাবেক জেলা জজ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকা ধরে তাদের অতীত ইতিহাস যাচাই-বাছাই চলছে। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে এক ডজন নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কমিশনার পদের জন্য ২০-২৫ জনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনার পদে বিগত দুটি কমিশনের মতোই এবারও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন সাবেক জেলা জজ, সিভিল প্রশাসনের সাবেক একজন কর্মকর্তা ও একজন নারী সদস্য নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।
এদিকে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন। উদ্দেশ্য একটি, ‘স্বাধীন সার্বভৌম, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, শক্তিশালী ও কার্যকর’ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন। আগামী সপ্তাহে এই সংলাপ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। ধারাবাহিক এই সংলাপে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রথমে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার কথা ভাবনায় রয়েছে। এরপর অন্যরা। তবে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামী সংলাপে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে ইসি পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের পর সুবিধাজনক সময়ে সংলাপ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংলাপ শেষ করার প্রস্তুতি রয়েছে। এ জন্য এক দিনে একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসা হবে। সংলাপে কোন কোন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নিতে পারে সংসদের বিরোধী দল। মাঝামাঝি পর্যায়ে ডাকা হতে পারে আওয়ামী লীগকে। এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংবিধানে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও কোনো সরকারই সেই পথে হাঁটেনি। সংবিধানের আরেকটি অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে দেয়া ক্ষমতা অনুযায়ী কমিশন গঠিত হয়ে আসছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নতুন ইসি গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ওই সংলাপে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। ওই সংলাপের পর সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইসি গঠন করা হয়েছিল।
বর্তমান ইসির মেয়াদ আছে আর দুই মাস। আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসির স্বচ্ছতা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক হয়েছে। প্রশ্ন তুলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদেরও কেউ কেউ।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর যে সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন, তার প্রধান ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। চার সদস্যের ওই সার্চ কমিটি সিইসি পদের জন্য দু’জন এবং নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তাদের মধ্য থেকে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে সিইসি এবং আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন মো. জিল্লুর রহমান।
২০১৬ সালে একইভাবে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর সংলাপ শুরু হয়েছিল। এক মাসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ মোট ৩১টি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন তিনি। দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি এবং দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠনসহ বিভিন্ন পরামর্শ এসেছিল। সংলাপ শেষে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি নতুন ইসি সদস্য কারা হবেন, তা খুঁজে বের করার জন্য ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কমিটির সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ড. মোহাম্মদ সাদিক, মাসুদ আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক শিরিন আখতার। এ কমিটিকে দশ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল। এই সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক ছাড়াও প্রথমে ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং পরে আরও চারজনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দলের কাছ থেকে পাঁচটি করে নাম নেন তারা। ১৩০টি নামের মধ্য থেকে ২০টির সংক্ষিপ্ত তালিকা করে সার্চ কমিটি। তারা ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই রাষ্ট্রপতি সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনাররা দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবার কোন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বিকল্পধারা ও তরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নিশ্চিত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়াও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাকের পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস্? পার্টি (এনপিপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More