কুমার-নবগঙ্গায় দখল-দূষণ : বাধ দিয়ে করা হচ্ছে মাছচাষ

অভিযানের পর ফের শুরু হয় দখল উৎসব : ১২৪ কিলোমিটারের কুমার নদ এখন মৃতপ্রায়
স্টাফ রিপোর্টার: দখল, দূষণ আর নাব্য সংকটে ধুঁকছে ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলায় বয়ে যাওয়া কুমার নদ ও নবগঙ্গা নদী। নদী দুটিকে দখলমুক্ত করতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অভিযানের পর ফের শুরু হয় দখল উৎসব। কুমার নদ বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মাঝ বরাবর বয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় প্রবাহিত মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া ১২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদ এখন মৃতপ্রায়। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে হরিণাকু-ুর রিশখালি, সোনাতনপুর, ভুঁইয়াপাড়া ও ভেড়াখালি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা। এটি মিশেছে মাগুরায় গড়াই নদীতে গিয়ে। নদী দুটির দুই ধারে পড়ে থাকা চর পরিণত হয়েছে আবাদি জমিতে। কোথাও কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে পাকা স্থাপনা। কিছু অংশে নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ। ফলে প্রবাহ বন্ধ হয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে এই দুটি নদী। নদী দুটির বিভিন্ন অংশে ঘুরে দেখা গেছে, এর দুই ধারে পড়ে থাকা চরের হাজার হাজার একর জায়গা দখল করে চলছে ফসলের আবাদ। কোথাও কোথাও পাকা স্থাপনাও গড়ে তুলেছে প্রভাবশালীরা। আশ্চর্যের বিষয় হলো নদীর জায়গা দখলে নিয়ে গড়ে উঠেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানও। কুমার নদের ভবানীপুর অংশে গড়ে তোলা হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। মাঝখানে ফাঁড়ির সীমানা পাঁচিল দিয়ে কুমারকে একপ্রকার মেরে ফেলা হয়েছে। প্রায় এক একর ৬০ শতক জমির ওপর ফাঁড়িটি স্থাপন করা হয়েছে। তৈলটুপি এলাকায় নদের অংশে পড়ে থাকা চরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। সেখানে মাটিখেকো চক্র পুকুর কেটে মাছ চাষ করছে। এছাড়া কুমারের পুরো অংশের দুই ধারের দখল নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে শতাধিক স্থাপনা।
কুমার নদ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ মারুফ জানান, নদকে দখলমুক্ত করতে সভা-সমাবেশ, নদী রক্ষা কমিটি বরাবর প্রতিবেদন পাঠালেও কোনো ফল হয়নি। কুমার নদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জরিপ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক আলতাব হোসেন রাসেল। তিনি বলেন, কুমার নদের উৎসমুখ থেকে শুরু করে পুরোটাই দখলের কবলে। সরকার দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। তবুও ফল হচ্ছে না।
নবগঙ্গার ভেড়াখালি, ভুঁইয়াপাড়া ও সোনাতনপুর এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ দখলে অন্তত চারটি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। বাঁধ দেয়ার ফলে প্রবাহ বন্ধ হয়ে ওই অঞ্চলে নদীটি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর ওই অংশের দুই পাড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি। আর বাঁধ দেয়ার ফলে সেচ কার্যক্রম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েক হাজার কৃষক। বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখায় অতিরিক্ত পানির প্রবাহে বর্ষা মরসুমে ওই এলাকার নদীপাড়ের অন্তত ৫০টি ঘরবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, জনতা মৎস্যজীবী সমিতির নামে প্রভাবশালীরা ১২ বছর ধরে নদীতে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করছে। তবে ওই সমিতির নেতারা বলছেন, তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লিজ নিয়ে বৈধভাবে মাছ চাষ করছেন।
মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তারা নবগঙ্গার একটি অংশ ইজারা নিয়েছেন। প্রতি বছর ছয় লাখ টাকা খাজনা দিয়ে মাছ চাষ করছেন।
জেলা নবগঙ্গা রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক সাইফুজ্জামান শিমুল বলেন, বছরের পর বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী দখলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী মহল। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামও করেছেন তবুও কোনো ফল হচ্ছে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিবুল ইসলাম খান বলেন, ইতোমধ্যে এসব নদী থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোথাও ইজারা দেয়া থাকলে সেটি বাতিল করা হবে। খুব শিগগিরই নদী দখলমুক্ত করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More