স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে পশুর হাট। হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। কোরবানির পশুর দামও ভালো বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তাই পশু কিনতে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্য চলছে দর কষাকষি। চুয়াডাঙ্গার শিয়ালমারী পশুহাট, ডুগডুগি হাট, মুন্সিগঞ্জ হাট এবং আলমডাঙ্গা পশুহাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। শিয়ালমারী পশুহাটে গরু বিক্রি করতে আসা জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন গরু-ছাগলের দাম তুলনামূলক বেশি। আজকে হাটে তিনটি গরু এনেছিলাম বিক্রির জন্য। পাঁচ হাজার টাকা করে লাভে দুটি বিক্রি করেছি। আরেকটা গরুর আশানুরূপ দাম না হওয়ায় বিক্রি করিনি। আগামী হাটে বিক্রি করবো।
মৃগমারী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী বেল্টু বলেন, অন্যদিনের তুলনায় আজকের হাটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা এসেছেন। একারণে গরুর দামও বেশি। আজকে হাটে পাঁচটা গরু এনেছিলাম। সবগুলো গরু বিক্রি বিক্রি হয়ে গেছে। লাভও বেশি হয়েছে। গরুর দাম এরকম থাকলে গরু পালনকারীরা লাভবান হবেন।
শিয়ালমারী হাটে পশু কিনতে আসা মাজেদুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর খামার থেকে গরু কিনে থাকি। খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা রয়েছে। ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোয়াতে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা একটু বেশি।
হাটে গরু কিনতে আসা নাসির উদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এ বছর গরু প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগসূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১১ হাজার ১৬০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৯৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৫ হাজার ১৯৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২ হাজার ৫০৪টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ২৭০টি। এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৩১ হাজার ৮৭১টি, মহিষ ১৩৮টি, ছাগল ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬টি ও ভেড়া ১ হাজার ৫২৭টি। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৭ হাজার ৭৯৬টি। সে হিসাবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৬২ হাজার ৭৭৬ কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে।
জীবননগর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের খামারি আবুল কালাম বলেন, তিন বছর আগে খামার গড়েছিলাম। খামারে মোট ২০টি গরু রয়েছে। যার মধ্য ১৮টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্যে থাকে তাহলে খামারিরা লাভবান হবেন।
একই উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের খামারি রহিম শেখ বলেন, পাঁচ বছর আগে শখের বশে একটি খামার তৈরি করি। আমার খামারে বর্তমানে ১০টি গরু রয়েছে। যার মধ্য তিনটি গরু বিক্রি করেছি। বাকি গরু ঈদের মধ্য বিক্রির আশা করছি। যদি এমন দাম থাকে তাহলে লাভবান হতে পারবো।
জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারি আবুল বাশার বলেন, আমার খামারে ৫০টি কোরবানি উপযুক্ত গরু ছিল। ২০টি গরু এরই মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনো আমার খামারে ৩০টি গরু আছে। এই গরুগুলো আরও সাইজে বড়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না লাভ হবে না লোকসান হবে।
তিনি আরও বলেন, খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি। এলাকায় বিক্রির উপযুক্ত কোরবানির গরু গত বছরের তুলনায় কম। বেচাকেনা গত বছরের তুলনায় কম হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রায় ৩২ হাজার ৯শ গরু ও মহিষ মোজাতাজা করা হয়েছে। এছাড়া এবার ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৩ ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। খামারগুলোতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারিদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন হাট ও খামারগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে খামারিদের বিভিন্ন সময় প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। খামারিদের পালনকরা পশু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা পূরণ করবে।
ডা. গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, ভারতের গরু যেন কোনোভাবেই আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। খামারিরা এবার কোরবানির পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।
মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুইবছর লকডাউনে বন্ধ ছিল জেলার পশুহাটগুলো। এবছর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বেচাকেনা চলছে পশুর হাটগুলোতে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবছর লাভের মুখ দেখবেন খামারিরা। এছাড়া ফেরিঘাটে ভোগান্তি এড়াতে পদ্মা সেতু দিয়ে কোরবানির পশুবাহী পরিবহন রাজধানীর পশুহাটে নিতে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।