হাসমত আলী: ১৯৮২ সালের ১২ ডিসেম্বর বিশিষ্ট রসায়নবিদ ও কৃষিবিদ জালাল উদ্দীনসহ এলাকার বেশকিছু শিক্ষিত সমাজ সেবকদের উদ্যোগে পথচলা শুরু করে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি আদর্শ সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চলছে। ৭২জন সদস্য নিয়ে ১৯৮২ সালের ১২ ডিসেম্বর রসায়নবিদ ও কৃষিবিদ জালালা উদ্দীনকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি করে এ সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সমিতির মাধ্যমে শুরু হয় আধুনিক পদ্ধতিতে ইরি ধান চাষ। বৃষ্টির ওপর নির্ভর না করে ডিজেল চালিত ইঞ্জিন দিয়ে সেচ কাজ করার লক্ষ্যে প্রথম ৫টি গভীর নলকূপ বসানো হয়। প্রথম বছরের ধান চাষ হয় ৮শত বিঘা। ধানের সেচের সমস্যা না হওয়ায় ও ফলন বেশি হওয়ায় আনন্দিত হয় কৃষককূল। ক্রমেই বাড়তে থাকে সদস্য সংখ্যা। বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৩৮ জন। এ সমিতির সেচযন্ত্র উপকরণসহ গভীর নলকূপ রয়েছে ১১টি। এলাকার ধান চাষিদের সেচ চাহিদা পূরণে অপরিসিম ভূমিকা রাখে আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতি লি.। প্রথম দিকে দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনোনীত হলেও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় সমিতি পরিচালনা পরিষদ। কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর ফলে বাংলাদেশের সেরা সমিতি নির্বাচিত হয়। এর পূর্বেও একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে সমিতিটি। কুড়–লগাছি আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধীন ইরি মরসুমে ১৬শ বিঘা এবং আমন মরসুমে ১৪শ বিঘা জমিতে ধানচাষ হয়। তাছাড়াও সারা বছরই বিভিন্ন চাষ হয়। বছরে আয় ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টাকা। প্রতিবছর আয় ব্যয় সমান। প্রতি বছর ১৭ লাখ টাকা বিদ্যুৎবিল, ১৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা কর্মচারী বেতন, নালা পরিষ্কার ৪ লাখ টাকা, মুনাফা দিতে হয় ৮ লাখ টাকা। এ বছর প্রত্যেক সদস্যকে এক হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয় সমিতির পক্ষ থেকে।
২০১০ সালে বাংলাদেশের সমবায় স্বর্ণ পদক লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পানি উন্নয়ন স্বর্ণ পদকে ভূষিত হয়।
সমিতির প্রতিষ্ঠাতা যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা ঋণ করে ৫টি গভীর নলকূপ বসায় এলাকার কৃষকের কথা চিন্তা করে। আমরা সমিতি থেকে সব ঋণ পরিশোধ করি এবং সমিতিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করি। কিন্তু গত ৩৯ বছর ধরে সমিতিতে কোনো লাভ দেখাতে পারিনি পরিচালনা পরিষদ। আয়-ব্যয় সমান করে রাখে। সমিতির উন্নয়নে সবার আগে পরিচালনা পরিষদে শিক্ষিত ও সৎ মানুষ আসতে হবে। তা না হলে সমিতি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে।
সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক ম্যানেজার রমযান আলী বলেন, কুড়ুলগাছি আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতির পরিচালানা পরিষদের জবাবদিহিতা থাকা উচিত। এতো বড় সমিতি সারা বাংলাদেশে বিরল। সমিতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সঠিক নেতৃত্বের প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি শরফরাজ উদ্দীন (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান) বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানের ৩ বার সভাপতি ও ১ বার ম্যানেজার নির্বাচিত হয়েছি; ১৯৯১ সালের খরা ও তেলের সংকটে মাঠে অনেক ফসল নষ্ট হলে সমিতি অনেক ঋণে পড়ে যায় এবং ২০০০ সালে বন্যায় মাঠের ধান ডুবে যাবার ফলেও ঋণ হয়। সমিতি প্রায় ভেঙে যাবার উপক্রম হয়। তখন আমি সভাপতি ছিলাম এবং ম্যানাজার ছিলো উজির। আমরা নিজ জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার সমিতিকে সচল করি। যেহেতু আমি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমি মনে প্রাণে এই সমিতিকে ভালবাসি। এ বছর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে ভূষিত হয় এ সমিতি। আগামীতে কুড়ুলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করবো; তাই এ বছর সমিতির নির্বাচন করবো না। আগামী মাসের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের মেয়াদ থাকলেও আগেভাগে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। কুড়–লগাছি আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতি লি. দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে চাষিদের কল্যাণে যেমন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে; তেমনি দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণে হচ্ছে অংশিদার।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ