মাদরাসার বিদায় নিয়ে আলমগীরের চিরবিদায় : বায়না পূরণ হলো না রোজার
স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুর শহরে, অপরটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার আড়পাড়া বাজারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিতে এসে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন মেহেরপুর দারুল উলুম আহমদিয়া মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী আলমগীর হোসেন।
এদিকে, নানাবাড়ি যাওয়ার জন্য কয়েকদিন ধরে বায়না ধরছিলো রোজা। বাবা-মায়ের সাথে নানাবাড়ি যাওয়ার পথেই প্রাণ গেলো লাটাহাম্বারের চাকায় পিষ্ট শিশু রোজার। মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে লাটাহাম্বার চাপায় তার মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হয়েছেন রোজার বাবা আসাদুজ্জামান ও মা মৌসুমি খাতুন।
জানা গেছে, সোমবার সকালে মেহেরপুর কোর্ট সড়কের পাবলিক লাইব্রেরির মোড় এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। আলমগীর হোসেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের তৌফিকুল ইসলামের ছেলে। আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো তার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আলমগীর হোসেন মোটরসাইকেলযোগে তার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে মাদরাসা থেকে শহরের প্রধান সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। পাবলিক লাইব্রেরি মোড় এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ইজিবাইক তাকে ধাক্কা দিলে রাস্তার উপর পড়ে মারাত্মক আহত হন আলমগীর। তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত স্ট্রিয়ারিং গাড়ি লাটা হাম্বারের চাকার নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে রোজা (৭) নামের এক শিশু। রোজা গাংনী উপজেলার গোপালনগর গ্রামের চাতরপাড়া এলাকার আসাদুজ্জামানের একমাত্র মেয়ে ও গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। গতাকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে গাংনী-চাঁন্দামারী রাস্তার আড়পাড়া বাজারের উপর এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন শিশুটির বাবা আসাদুজ্জামান (৩৮)।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সানোয়ার হোসেন জানান, আসাদুজ্জামান তার স্ত্রী ও শিশুকন্যা রোজাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে রোজার নানা বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। একই দিকে যাচ্ছিলো ধানের বস্তাবোঝাই একটি স্ট্রিয়ারিং লাটা হাম্বার। লাটা হাম্বারকে ওভারটেক করে বের হওয়ার সময় সামনে পড়েন একজন পথচারী। তাকে বাঁচাতে গিয়ে লাটা হাম্বারের সামনের রডের সাথে ধাক্কা লেগে শিশুটি চাকার নিচে পড়ে যায়। সাথে সাথে শিশুটিকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা হাসপাতালে নিলে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চোখের সামনেই প্রাণ প্রিয় সন্তান নিহত হওয়ায় মা মৌসুমি খাতুন বার বার মোর্ছা যাচ্ছেন। বাবা আসাদুজ্জামান জানান, ‘কয়েকদিন ধরেই নানা বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না ধরছিল রোজা। সোমবার সকালে নানা বাড়ি যাওয়ার জন্য সকাল থেকেই সাজছিল সে। আমরা কি জানতাম এটাই ছিল রোজার শেষ সাজ-গোছ করা।’
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ