পাসকৃত বাজেট যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

সম্পাদকীয়

গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হলো নতুন অর্থবছর। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট। তথ্য মতে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটের মধ্যদিয়ে পাস হয় এই বাজেট। প্রসঙ্গত এটা আমলে নেয়া দরকার, করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়েছিল পুরো বিশ্ব। দেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণে নানা ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং জনজীবনে নেমে এসেছিল সামগ্রিকভাবে অনিশ্চয়তা। আর তা যখন মোকাবিলা করে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠছে বিশ্ব, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব হিসাব ওলট-পালট করে দিয়েছে। সংকটে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। আর কঠিন এই বাস্তবতায় গত ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের ১৪তম অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার চতুর্থ বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪তম বাজেট এটি যা দেশের ইতিহাসে একক কোনো দলের টানা ১৪ বার বাজেট দেয়ার রেকর্ড।

প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, এবার বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই পাস হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট পাস হয়। গত ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর গত ২০ দিন সংসদ ও সংসদের বাইরে বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। এবারে বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর এনবিআর-বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে করছাড় প্রাপ্তি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী বছরের জন্য উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া আড়াই লাখ কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার ঋণ নেবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংক-বহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেবে সরকার। এ ছাড়া লক্ষণীয় যে, এর আগে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বহাল রেখে সংসদে অর্থ বিল-২০২২ পাস হয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। এবারের বাজেটে ৭ শতাংশ কর দিয়ে শুধু পাচার করা নগদ টাকা দেশে আনা যাবে। আর যারা সরকারের দেয়া এ সুযোগ নেবেন না, তাদের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আনার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে যে সুযোগ রাখা হয়েছিলো তা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, বাজেট উপস্থাপনের পরে খবরে এমন বিষয় উঠে এসেছিল, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে বাজেটে। এছাড়া প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করজাল পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা, কর কাঠামোর অটোমেশন, যৌক্তিক রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও সরকারি ব্যয়ে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে হবে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিলো। আমরা মনে করি, যখন বাজেট পাস হলো, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে সারা পৃথিবীতে। সঙ্গত কারণেই এটি আমলে নিয়ে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি প্রত্যাশিত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More