সর্বত্র নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারিভাবে দিবসটি পালিত হবে। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে সাম্যবাদী নারীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করেন জার্মান কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেৎকিন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর পর থেকে ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এটা সত্য, নারীর সমতা অর্জনের বিষয়টি শুধু ন্যায্যতা এবং মানবাধিকারের মৌলিক বিষয় নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রের অগ্রগতিও এর ওপর নির্ভরশীল। নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা এবং উন্নয়নের মূলধারায় পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীসমাজ যাতে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সমাজে নারী-পুরুষ নিজ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল। পরিবার ও সমাজে কন্যা-জায়া-জননী হিসেবে নারীর ভূমিকা বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। একই সঙ্গে নারীর মানবিক মর্যাদা ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। আসলে একটি আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা ভূমিকার কথা চিন্তাও করা যায় না। নারী-পুরুষ কেউ কারও প্রতিপক্ষ তো নয়ই, বরং একে অপরের পরিপূরক। আর এই কথাগুলো মূলত আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করেই। সমকালীন বিশ্বে নারী নেতৃত্ব অনেকটাই সুপ্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘ ও অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারীসমাজও ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে; তবে অত্যন্ত জটিল ও পুরোনো অনেক সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে এখনো বিভিন্ন গুরুতর প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হলো নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, যার ফলে নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে পড়েছে।
নারীকে বাদ দিয়ে সুষম সমাজের কথা চিন্তা করা যায় না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমঅধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজই হচ্ছে একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা। যদি সমাজে নারীরা পিছিয়ে থাকে তাহলে গোটা সমাজ ব্যবস্থার ওপরই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নারীকে সমঅধিকারসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বিবেচনা না করার প্রবণতা সমাজ ও দেশকে পেছন দিকেই টেনে নেয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানোই সভ্যতা ও সংস্কৃতির দায়। একই সঙ্গে রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজেরও। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তো আগেই বলেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার নাগরিক হিসেবে পুরুষের সমান অধিকার থাকা সত্ত্বেও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। নারী সহিংস অপরাধের শিকার হলে তার যথাযথ প্রতিকার পাওয়ার আইনি বিধান ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণ থেকে শুরু করে অন্যান্য সহিংসতার শিকার নারীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিশেষত, ধর্ষণের অপরাধ আদালতে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সমাজের ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বাধা হিসেবে কাজ করে। মাঝে মধ্যে যেসব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তা থেকে জানা যায়, ৮৭ শতাংশ নারী নিজের ঘরেই নিগ্রহের শিকার; গণপরিবহণে যৌন নিপীড়নের শিকার ৯৪ শতাংশ নারী। নারীর নিরাপত্তার অবস্থা যখন এমন হতাশাব্যঞ্জক, তখন অর্থনৈতিক কর্মকা-সহ নানা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে- এটা সার্বিক বিবেচনায় কতটা অগ্রগতি, তা ভেবে দেখার বিষয়।
প্রতি বছর নারী দিবস পালন করা হয়। তারপরও বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ নানাবিধ কারণে এখনো অনেক নারীকে নির্যাতিত হতে হচ্ছে। কখনো কখনো দিতে হচ্ছে জীবন। নিরাপদে চলাফেরা করাও নারীর জন্য দুষ্কর। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রেও নারীর বৈষম্য সেভাবে কমেনি। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকারও নারী- এমন অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী। আর কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ তো সেই অতীত থেকেই। এ ক্ষেত্রেও নারী অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার। সর্বস্তরে নারীর অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বত্র সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More