চুয়াডাঙ্গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে কমিউনিটি পুলিশিং ডে পালিত : কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার: ‘মুজিববর্ষের মূলমন্ত্র, কমিউনিটি পুলিশিং সর্বত্র’ সেøাগানে চুয়াডাঙ্গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং ডে। এ উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় শহরের শহীদ হাসান চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে চুয়াডাঙ্গা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। প্রধান আলোচক ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্য পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের, নুঝাত পারভীন ও মোল্লা আব্দুর রশিদ। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক, আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর কবীর, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জানিফসহ কমিউনিটি পুলিশিং এর বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ।
সভায় কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। আজ বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। চুয়াডাঙ্গা এক সময় রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিলো। এখন পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। আর কমিউনিটি পুলিশিং জেলায় অপরাধ দমনে অপরিসীম ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়৷ তবে পুলিশকে সাধারণ মানুষের কথার গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন জনপ্রতিনিধিরা নয়, পুলিশই হচ্ছে জনগণের শেষ ভরসার স্থান। এদিকটাও আপনাদের খেয়াল করতে হবে। সর্বোপরি মাদক ও জঙ্গি দমন ছাড়াও বিভিন্ন কাজে পুলিশের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার।
সভায় প্রধান আলোচক চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং এর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে হবে। নতুন করে বিট পুলিশিং এর যে কার্যক্রম জেলা পুলিশ পরিচালনা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ উদ্যোগের ফলে শুধু অপরাধই কমবে না, পুলিশের সাথে জনগণের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। জনগণ ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, পুলিশের সেবার মান অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভালো। দেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য আসুন আপনারা আমরা সবাই মিলে কমিউনিটি পুলিশকে সহযোগিতা করি। তিনি আরও বলেন, একটি দেশকে ধ্বংস করার জন্য মাদক অনেকাংশে দায়ী। আমরা কেউ যেন মাদকের বিষয়ে কারো কাছে কোনপ্রকার সুপারিশ না করি। আমি বিগত ১২ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আছি। আজ পর্যন্ত মাদকের বিষয়ে কারো কাছে কোনো সুপারিশ করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। আশাকরি আপনারাও কেউ মাদকের ব্যাপারে কারো কাছে কোনো সুপারিশ করবেন না। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধ করতে সবারই উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা।
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, আগের তুলনায় মানুষের কাছে পুলিশের আস্থা অনেক বেড়েছে। বাড়িওয়ালা রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য মানুষ এখন পুলিশকে ফোন করে, সহযোগিতা চায়। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বের রোলমডেল। অনেক উন্নত দেশ বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে গবেষণা করে। ঝড়ে রাস্তার ওপর গাছ পড়ে থাকলেও পুলিশ সদস্যরা তা পরিষ্কার করে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে তোলে। এসব কাজ তো পুলিশের নয় তাও আমরা করছি। তিনি আরও বলেন, মাদক উদ্ধার করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাজ হলেও বাংলাদেশ পুলিশ মাদক উদ্ধারে এখন চ্যাম্পিয়ন। পুলিশের কাজে আরও গতি আনতে জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন এজেন্সির প্রতিনিধি, সুশীল সমাজসহ সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে পুলিশ হেড কোয়ার্টার মনোনীত শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক একরামুল হুসাইন (পদোন্নতি প্রাপ্ত পরিদর্শক) ও শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য আলমডাঙ্গার মাহমুদুল হাসান চঞ্চলের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। তিনজন দুস্থ অসহায় মানুষকে প্রদান করা হয় হুইল চেয়ার, চশমা, শাড়ি ও ওষুধ সামগ্রী। পরে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে কেক কাটেন অতিথিবৃন্দ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More