স্বল্পমূল্যের উন্নত গোখাদ্য হিসেবে করা হচ্ছে বস্তাবন্দি

চুয়াডাঙ্গায় মাঝপথেই কৃষকেরা বিক্রি করে দিচ্ছেন কাঁচা গাছসহ ভুট্টা

নজরুল ইসলাম: দেশে রয়েছে গো খাদ্যের সংকট। ধানের বিচালিকে গো খাদ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে ধরা হয়। সেই বিচালির উৎপাদন হ্রাস এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে গরু মোটাতাজাকরণ ব্যয় বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের চাহিদা মিটিয়ে গো খাদ্যের যোগান দিতে চুয়াডাঙ্গাতে অবস্থান করছেন মেঘডুবি এগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্বল্পমূল্যের উন্নত গোখাদ্য তৈরি করতে কিনছেন গাছসহ ভুট্টা। সাইলাইজ করে তা বস্তাবন্দি করছেন প্রতিষ্ঠনটি। আর এ কারণে ভুট্টাচাষিরা মাঝপথেই বিক্রি করে দিচ্ছেন গাছসহ ভুট্টা। ভুট্টার জমি খালি হয়ে যাওয়ায় চাষ করার সুযোগ পাচ্ছেন নতুন ফসলের।

জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। দেশে ভুট্টার চাহিদা এবং দাম থাকায় চলতি বছর সর্বোচ্চ ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এসব ভুট্টা রোপণ করা হয়েছে নভেম্বর মাসের দিকে। এখন ভুট্টার মোচা বের হয়ে সামান্য লালচে আকার ধারণ করেছে। ভুট্টা কাটতে এখনও তিন মাস বাকি। এরই মধ্যে ঢাকা মেঘডুবি এগ্রো ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে কাছা গাছসহ ভুট্টা কিনছেন। চাষিরা এক বিঘা ভুট্টার জমি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করছেন। কোম্পানির লোকজন সে ভুট্টা চাষিদের জমি থেকে কেটে এনে মেশিন দিয়ে কেটে সাইলেজ (বিশেষ ব্যবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদি সংরক্ষণ) করছেন। ভুট্টাসহ গাছ বিক্রেতা কৃষক, তৌহিদ, মুলতাব, কাদের, জমির, তোফাজেল, সুমনসহ অনকেই জানালেন, এখনও ভুট্টা উঠতে তিন মাস বাকি। এরই মধ্যে কাঁচা ভুট্টাসহ গাছ বিক্রি করতে পারছি বলে বিক্রি করে দিয়েছি। কারণ যে ভুট্টা বিক্রি করেছি তা পরিচর্যা করে ঘরে তুলতে এখনও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ আছে। তার চেয়ে মাঝপথে বিক্রি করার ঝামেণা এড়ানো এবং নতুন ফসল চাষ করার সুযোগ পাচ্ছি। তাই বিক্রি করে দিয়েছি। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দর্শনা পৌর এলাকার শ্যামপুর গ্রামে এবং বিকেলে বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্তবাজারপাড়ায় গিয়ে কুষ্টিয়ার হালসা থেকে আসা কোম্পানির প্রতিনিধি মোস্তফার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মেঘডুবি এগ্রো ফার্ম নামে আমাদের একটি গরুর খামার আছে। আমাদের গাছসহ কেনা ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করে তারপর গরুকে খাওয়ানো হয় এবং অবশিষ্টগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়। ভুট্টা চাষ স¤পর্কে তিনি বলেন, নভেম্বরের শেষদিকে এগুলো লাগানো হয়েছে। গাছে ভুট্টা ধরতে প্রায় চার মাসের মতো সময় লাগে। ভুট্টা ধরার পর পুরো গাছ আমরা কেটে ফেলি। তারপর মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট পিস করে প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে প্রায় একমাস ড্রাম বা পলিথিনের ভেতরে ফেলে রাখি। পরে খুলে গরুকে খাওয়ানো হয়। গরুর খামারিরা অনেক সময় ফিড খাওয়ান। এই ফিডের দাম বেশি। সেসব ছোট খামারিদের খরচ কমানোর জন্য এটি আমাদের মূল টার্গেট। আমরা গরুর খাদ্য হিসেবে এই উন্নত গোখাদ্য ভুট্টা সাইলেজ বাজারজাতও করছি। ভুট্টা গরুর সবচেয়ে প্রিয় খাবার। ১ কেজি ভুট্টা সাইলেজ এর দাম ১২ টাকা এবং ৫০ কেজি বস্তার দাম ৬শ টাকা। ব্যয় ও উৎপাদনের আশানুরূপ লাভ না থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক খামার বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা কমমূল্যে উন্নত গোখাদ্য সরবরাহ করছি। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্রসাহ বলেন, এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলাতে সর্বোচ্চ ভুট্টার চাষ হয়েছে। তবে গাছসহ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। চাষিরা লাভবান হলে ভালো কথা। তারপরও খোঁজ নিয়ে দেখবো। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, এটা গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত এবং উৎপাদন বৃদ্ধি জাত খাবার। জেলাতে এখাবার উৎপাদন হয় কিনা আমার জানানেই। তবে এ সাইলাজ গরুর জন্য খুবই উপকারী।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More