আপাতত উচ্ছেদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে গাংনীর আলোচিত জেলা পরিষদ মার্কেট

মেহেরপুরে সড়ক ও জনপথের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে বিভিন্ন সময় গড়ে ওঠা সড়ক ও জনপথের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেহেরপুর শহরের কলেজ মোড় থেকে শুরু করে ওয়াবদার মোড় হয়ে দিঘির পাড়া পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে, চলমান উচ্ছেদ অভিযান থেকে আপাতত রক্ষা পাচ্ছে গাংনীর জেলা পরিষদ মার্কেট। সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদ ঘোষণায় গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন নানা আশঙ্কা আর মালামাল নিয়ে ব্যবসায়ীদের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে রাতে এ সু-সংবাদটি দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি ও মাইকিং করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় উপ-সচিব ও আইন কর্মকর্তা অনিন্দ্যিতা রায়ের নেতৃত্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে মেহেরপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাসহ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। মেহেরপুর শহরের কলেজ মোড় এলাকা থেকে শুরু করে ওয়াবদার মোড়, মেহেরপুর-২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনে এবং কুষ্টিয়া সড়কের দিঘিরপাড়া পর্যন্ত প্রথম দিনে উচ্ছেদ অভিযান চলে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় উপ-সচিব ও আইন কর্মকর্তা অনিন্দ্যিতা রায় জানান, সরকার মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক চারলেনে প্রশস্থকরণ কাজ শুরু করেছে। সে কারণে মেহেরপুর কুষ্টিয়া সড়কের ৩০ কিলোমিটারে অবস্থিত রাস্তার দুপাশের সকল অবৈধ স্থাপনা ও ফুটপাত দখলদারদের উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আগামী চারদিন এ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ৩০ কিলোমিটার সড়ক দখলমুক্ত করা হবে। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ফোরলেন সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য মূলত এ অভিযান। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার আগে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দখলদারদের নোটিশ প্রদান করা হয়। অভিযানকালে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল করিম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের দু’পাশে চলমান উচ্ছেদ অভিযান থেকে আপাতত রক্ষা পাচ্ছে গাংনীর জেলা পরিষদ মার্কেট। গাংনী বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দোতলা এ মার্কেটে প্রায় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদ ঘোষণায় গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন নানা আশঙ্কা আর মালামাল নিয়ে ব্যবসায়ীদের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে রাতে এ সু-সংবাদটি দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম।

জানা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি সংস্কার ও প্রশস্থকরণ কার্যক্রম শুরু সড়ক ও জনপথ বিভাগ। জেলা ভিত্তিক মেগা প্রকল্পের আওয়ায় কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর কলেজ মোড় পর্যন্ত এ সংস্কার কাজ হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কাটা হচ্ছে সড়কে পাশের গাছ গাছালী। সড়ক প্রশস্থ করণের জন্য সড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবমুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত পরশু বুধবার সকালে মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে উচ্ছেদ শুরু হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার গাংনী শহরের হাসপাতাল বাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। এর আগে রাস্তা মাপজোক করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সীমানা লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যে লাল দাগের মধ্যে পড়ে গাংনীর জেলা পরিষদ মার্কেট। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জেলা পরিষদ মার্কেটের দোকানীদেরকে মালামাল সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। এদিকে উচ্ছেদ শুরু হলে বেশিরভাগ দোকান ও বাসা মালিক তাদের স্থাপনা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে থাকেন। গতকাল বৃস্পতিবার বিকেলে উচ্ছেদ অভিযান দল যখন গাংনী হাসপাতাল বাজারে কাজ শুরু করে তখন জেলা পরিষদের ব্যবসায়ীরা মালামাল সরাতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। রাত ৯টা পর্যন্ত অনেকে মালামাল ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেন। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই সিদ্ধান্ত ভুল বলে দাবি করে আসছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। মেহেরপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, আরএস রেকর্ড অনুযায়ী গাংনী জেলা পরিষদের জায়গার মালিক মেহেরপুর জেলা পরিষদ। মালিকানা অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গায় দোতলা মার্কেট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যদি সড়ক প্রশস্থ করণের জন্য এ জায়গার প্রয়োজন হয় তবে তা নিয়মের মধ্যে অধিগ্রহণ করতে হবে। বেআইনীভাবে মার্কেট উচ্ছেদ করা যাবে না। এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম বলেন, যা কিছু উন্নয়ন তা সবই মানুষের জন্যই। কাজেই বেআইনীভাবে উচ্ছেদ করে সড়ক নির্মাণ করলে উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলো কষ্টে পড়বে। তাছাড়া জেলা পরিষদের সামনে সড়কের উত্তর-পশ্চিম দিকে রাস্তার জায়গা রয়েছে ১৭০ ফুটের উপরে। এ জায়গা ফেলে রেখে জেলা পরিষদের মার্কেট  কেন ভাঙতে হবে? এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বে থাকা উপ-সচিব এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কাগজপত্র নিয়ে কথা হয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে জেলা পরিষদের এই মার্কেট ভাঙা হচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজের প্রয়োজনে যদি কোন সময় জায়গা ছাড়তে হয় তবে তা নিয়মের মধ্যেই ছাড়া হবে। কেউ আমাদের বুকের ওপর বুলডোজার চালিয়ে দেবে তা মেনে নেয়া হবে না। মালিকানা অনুযায়ী জেলা পরিষদ থেকে এই জায়গার খাজনা প্রতি বছর পরিশোধ করা হয়। কাজেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ মনগড়া সিদ্ধান্তে মার্কেট ভাঙতে পারবে না। গত রাতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এ বার্তা পৌঁছুনোর পর স্বস্তি ফিরে আসে জেলা পরিষদের মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মনে। উচ্ছেদ অভিযান সূত্রে জানা গেছে, গাংনী হাসপাতাল বাজার থেকে উত্তরপাড়া পর্যন্ত অনেক স্থাপনা রয়েছে। এগুলো ভেঙে সরিয়ে দিতে দুটি বুলডোজার ব্যবহার করা হবে। তাছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও অন্য দিনের চেয়ে বেশি থাকবে। জনবল বাড়ানো হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। যাতে কোন বিঘœ ছাড়াই কাজ সম্পন্ন করা যায়। অভিযান দলের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মাপজোককৃত সীমানা থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। মেহেরপুর পুরাতন বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে গাংনী হাসপাতাল বাজার পর্যন্ত কোনভাবেই ছাড় দেয়া হয়নি। উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More