গরু বিক্রিতে ৯ লাখ টাকা লোকসানের খবরে আলমডাঙ্গার আসমত আলীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছর করোনার প্রভাবে সারাদেশে শেষ মুহূর্তে পশুর হাট জমলেও গরুর কাক্সিক্ষত দাম পাননি খামারিরা। এতে করে লোকসানে পুঁজি হারিয়েছেন অনেক খামারি ও ব্যবসায়ী। প্রায় ৯ লাখ টাকা লোকসানের খবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার এক খামারির বাবা আসমত মালিথাও।
জানা যায়, অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে ১৫টি গরু নিয়ে ঢাকার গাবতলীতে কোরবানির পশুর হাটে গিয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামের আলিহার হোসেন। করোনার প্রভাবে মন্দা বাজারে ৯টি গরু বিক্রিতে লোকসান করেছেন ২ লাখ টাকা। পাশাপাশি গরমের ধকল সইতে না পেরে মারা যায় সবচেয়ে বড় ৯মণ ওজনের গরু। ব্যবসায় বড় ক্ষতির মুখে পড়ে কাতর হয়ে পড়েন আলিহার। খবরটা শোনার পর থেকে চিন্তিত ছিলেন তার বাবা আসমত মালিথাও (৭০)। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। শোকাহত আলিহার বাকি পাঁচটি গরু বিক্রি না করেই ফেরত নিয়ে আসেন বাড়িতে। এখন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামে তার বাড়িতে চলছে মাতম।
এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, টানা ২০ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করে আসছেন আলিহার হোসেন। বৃদ্ধ মা-বাবা এবং স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার তার। পরিবারটির একমাত্র আয়ের উৎস এই গরু ব্যবসা। এক হাট থেকে গরু কিনে অন্য হাটে বিক্রির পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে বাড়িতে গরু পালন করেন আলিহার।
আলিহার বলেন, বেলগাছি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঈদুল আজহা সামনে রেখে গরু পালন হয়। এ বছর করোনার কারণে স্থানীয়ভাবে পশুর হাট বন্ধ ছিলো। ফলে বেশির ভাগ মানুষই গরু বিক্রি করতে পারেননি। প্রায় এক মাস আগে তিনি তিন লাখ টাকা মূল্যের ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু কেনেন। কোরবানির ঈদের সময় বিক্রি করার জন্য লালন-পালন করতে থাকেন। এই সময়ে গরুটির পেছনে খরচ হয়েছে আরও ৩০ হাজার টাকা। ঈদের আগে আরও ১৪টি গরু কেনেন। ১৫টি গরু নিয়ে ১৩ জুলাই ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে যান।
আলিহারের আশা ছিলো, বড় গরুটা সাড়ে চার লাখ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু বাজারে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি দাম উঠছিলো না। তাই বিক্রি না করে ধরে রেখেছিলেন। হঠাৎ গত রোববার গরুটা অসুস্থ হয়ে মারা যায়। বাকি ১৪টি গরুর মধ্যে ৯টি বাজারে বিক্রি করতে সক্ষম হন তিনি। সেগুলো কেনা পড়েছিলো ১১ লাখ টাকায়। কিন্তু বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তার লোকসান হয়েছে ৯ লাখ টাকা।
আলিহারের স্ত্রী সবিতা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এই লোকসানের খবর জানার পর চিন্তিত হয়ে পড়েন তার শ্বশুর আসমত মালিথা। একপর্যায়ে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। এ অবস্থায় বাকি পাঁচটা গরু বিক্রি না করেই ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন তার স্বামী। সবিতা বলেন, ‘এবেড্ডা গরু ব্যবসা করতি গিয়ে যে ক্ষতি হইয়ে গ্যালো, তা কখনও পূরণ হবে না।’
মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব অনেকেই: আলিহার হোসেনের মতো অনেকেই এ বছর কোরবানির পশুপালন ও ব্যবসা করতে গিয়ে পুঁজি হারিয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের ইউপি সদস্য বদর উদ্দিনের লোকসান হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
বদর উদ্দিন বলেন, বাড়িতে পালিত ১৩টি গরু ঢাকায় কোরবানির পশুর হাটে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় দুটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। অথচ স্থানীয় ব্যাপারীরা গরু দুটির দাম বলেছিলেন ৬ লাখ টাকা। দাম পড়ে যাওয়ায় বাকি ১১টা গরু বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে এসেছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের মনিরামপুরে বাড়ি সাখাওয়াত হোসেনের। নিজের খামারে তিনি ১১টি গরু পুষেছিলেন। সেগুলো নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকা পশুরহাটে। এর মধ্যে তিনটি গরু ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকি গরুগুলো নিয়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ও ফেরত আনা এবং ঢাকায় থাকার সময় বিভিন্ন খাতে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। কবে গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন, তখন ন্যায্য দাম পাবেন কি না, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, এবার ঢাকায় যারা গরু নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ কাক্সিক্ষত দাম পাননি। ফেরত আনা গরুগুলোর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রাখা হয়েছে। দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়টির তদারক করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More