ঝিনাইদহে গৃহবধূকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ : শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৩জন আটক

বদরগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে এক সন্তানের জননীকে নিযার্তন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই গৃহবধূ শিখা খাতুন। শিখা খাতুন (২৮) ঝিনাইদহের সদর উপজেলার হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের প্রবাসী সাইফুল ইসলাম স্ত্রী এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মর্তুজাপুর গ্রামের মহর নস্করের মেয়ে। গতকাল বুধবার ঢাকা থেকে লাশ পিতার বাড়ী মর্তুজাপুরে নেয়া হয় এবং সেখানেই দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় গতকাল বুধবার শিখার শ্বশুর মালেক, শাশুড়ি ফরিদাসহ অজ্ঞাত কয়েজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশঙ্কর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেক হকের ছেলে প্রবাসী সাইফুল ইসলাম সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মর্তুজাপুর গ্রামের মহর নস্করকে মেয়ে শিখা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ে পর শিখার কোলে আসে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান। স্ত্রী-সন্তান রেখে স্বামী সাইফুল ইসলাম ওমান প্রবাসে চলে যান। তারপর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি বাড়িতে ছোট কিছু বিষয় নিয়ে শিখা খাতুনকে বিভিন্নভাবে অমানুষিক অত্যাচার ও নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। গত ২৭ মে শ্বশুর শাশুড়ি পরিবারের সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে গৃহবধূ শিখা খাতুনের ঝগড়া হলে ২৮ মে রাত দেড়টার দিকে পরিকল্পিতভাবে শ্বশুর, শাশুড়ি ফরিদা বেগম, ননদ আসমা খাতুনসহ অনেকই শিখা খাতুনকে ঘরে আটকিয়ে রেখে বেধড়ক মারপিট ও অমানুষিক অত্যাচার নিযার্তন করে। পরে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে শিখাকে মৃত অবস্থা দেখে শ্বশুর দেবর ও ননদ মিলে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে শিখার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। সেখানেও তার অবস্থা বেগতিক দেখা দেয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য শিখাকে ঢাকা গ্রীনরোড রিলেন্স জেনারেল এন্ড রেনাল হসপিটাল আইসিইউতে ভর্তি করান। গত ৩০ মে রাত ১২টার দিকে শিখা খাতুন মারা যান। গতকাল বুধবার ভোরের দিকে শিখার লাশ ঢাকা থেকে ময়না তদন্ত শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মর্তুজাপুর গ্রামে নিয়ে আসা হলে পিতামাতার কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। নিহত শিখার ফুফু নাজমা বেগম প্রতিবেদককে বলেন, শিখার ওপর অমানুষিক নিযার্তনসহ বেধড়ক মারপিট করে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় শ্বশুর শাশুড়ি ননদ ও দেবরা। পরে মর্মান্তিক অবস্থায় শিখাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। শিখা খাতুনের শাশুড়ি ফরিদা বেগম মোবাইল ফোনে আমাদের জানান, তোমাদের মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমরা শিখাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আমরা আমার ভাইসহ কয়েকজন দ্রুত মাগুরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় শিখার গায়ে আঘাতের চিহ্ন ও গলায় ফাঁস দেয়ার দাগ। আমরা শিখাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যেতে চাইলে শিখার শাশুড়ি ফরিদা, শ্বশুর মালেক আমাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে। শিখার ভাসুর সাইফুল, স্থানীয় চেয়ারম্যানের ক্যাডার সাদ্দাম আমাদের মারধর করার চেষ্টা চালায়। নিহতের পিতা মহর নস্কার বলেন, আমার মেয়ে শিখাকে তার শ্বশুর-শাশুড়ী মিলে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় নিহত শিখা খাতুনের পরিবার বাদি হয়ে গতকাল বুধবার শিখার শ্বশুর মালেক, শাশুড়ি ফরিদাসহ অজ্ঞাত কয়েজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এদিকে মর্তুজাপুর গ্রাম থেকে আটককৃত শিখার শ্বশুর শাশুড়ি ননদকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। গতকাল বুধবার আছর বাদ শিখা খাতুনের লাশ জানাজা শেষে মর্তুজাপুর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More