বৃষ্টির সময় ছেলেকে খুঁজতে বের হয়ে বাবাসহ ১০ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে দুইজন, শায়েস্তাগঞ্জে একজন, চুনারুঘাটে একজন, সুনামগঞ্জে একজন, ভোলায় একজন, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় দুইজন ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ও ভৈরবে দুইজনসহ মোট ১০ বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। শনিবার পৃথকভাবে বজ্রপাতের এসব ঘটনা ঘটে।
হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার আজমিরীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার সকালে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সদরের রনিয়া গ্রামের মালিক মিয়ার ছেলে মারফত আলী (১৭), একই গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে রবিন মিয়া (১৭), শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নূরপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের আছকির মিয়া (৫০) ও চনারুঘাটের শাহজাহান মিয়া (৪০)। পুলিশ জানায়, সকালে ৫ কিশোর আজমিরীগঞ্জের হাওরে মাছ ধরতে যায়। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই দুই কিশোর নিহত ও তিনজন আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে তারা মারা গেছে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। অপরদিকে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক জানান, সকালে নিহত আছকির মিয়া তার ছেলেকে ডাকতে বাইরে বের হন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে তিনি আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়াও, জেলার চুনারুঘাটে জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে শাহজাহান মিয়া (৪০) নামে এক কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের জোয়ার লালচান্দ গ্রামের আব্দুস শহিদের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৬ জুন) বিকেলে বাড়ির পার্শ্ববর্তী নিজের জমিতে কাজ করতে যান শাহজাহান মিয়া। এ সময় বৃষ্টিসহ বজ্রপাত শুরু হলে গুরুতর আহত হন শাহজাহান। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শানখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তরফদার সবুজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কৃষক শাহজাহান নিজের জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যায়।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মনাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মঞ্জু মিয়া (২২) নামের এক জেলে নিহত হয়েছেন। তিনি সেলবরষ ইউনিয়নের সলফ গ্রামের বাসিন্দা ফুল মিয়ার ছেলে। শনিবার (৬ জুন) সকালে মনাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। স্থানীরা জানান, সকালে মাছ ধরার জন্য জাল নিয়ে মনাই নদীতে যায় মঞ্জু। সেখানে কিছুক্ষণ মাছ ধরার পর বৃষ্টি আসে পরে বজ্রপাত শুরু হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে স্থানীয়রা তার মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ পুলিশের বিশেষ শাখার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন মৃধা।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলায় আউস ধানের ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে শনিবার সকালে বজ্রপাতে আব্দুল মালেক (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মোহাম্মদ আলী (৪৫) ও মো. কাসেম (৫০) নামে দুই কৃষক আহত হয়েছেন। নিহত আব্দুল মালেক ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিষয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চরকালি গ্রামের মৃত মুকবুল আহম্মেদের ছেলে। এছাড়াও আহতরা একই গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ভেদুরিয়া ইউনিকয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপিক সদস্য মো. মাকসুদ আলম জানান, শনিবার সকাল থেকেই ওই গ্রামের চর কালি বিলে আউস ক্ষেতে কাজ করছিলেন আব্দুল মালেকসহ আলী ও কাসেম। দুপুর দেড়টার দিকে বজ্রপাত শুরু হলে আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলে নিহত হন। ভেলুমিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আরমান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, জেলার বড়লেখা উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে পৃথক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউপির গল্লাসাঙ্গন গ্রামে ইসহাক আলীর ছেলে আব্দুল মতিন (৫৫) এবং উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের মৃত রমিজ আলীর ছেলে রুবেল আহমদ (২৫)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে আব্দুল মতিন বাড়ির পাশে সবজি ক্ষেতে কাজ করতে যান। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। পরে স্থানীয় লোকজন আব্দুল মতিনের লাশ জমিতে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। অন্যদিকে, দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে রুবেল আহমদ কাজিরবন্দ এলাকার একটি খালে ঠেলাজাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে আশপাশের লোকজন রুবেলের লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। বড়লেখা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক এবং মৃত দুই ব্যক্তির নিজ নিজ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার কুলিয়ারচর ও ভৈরবে বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে এ দুটি ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়নের বড় ছয়সূতি গ্রামের হারুন খন্দকারের ছেলে কামরুল খন্দকার (১৪) এবং ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের আহসানউল্লাহ মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া (২৮)। ভৈরব থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহীন মিয়া ও কুলিয়ারচর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল হাই তালুকদার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এলাকাবাসী জানায়, শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেলিম মিয়া মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। এ সময় বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত শুরু হলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। একই দিন সকালে বাড়ির পাশে ডোবায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাত নিহত হন কামরুল খন্দকার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More