মুজিবনগরের রতনপুর ট্যুরিস্ট পুলিশ সাইফুলের আত্মহত্যার কারণ খুঁজছে পুলিশের তদন্ত দল

মুজিবনগর প্রতিনিধি: নিজের ব্যবহৃত রাইফেল মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন সাইফুল ইসলাম (২৭) নামের এক পুলিশ কনস্টেবল। গত (২১জুলাই) বুধবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর টুরিস্ট পুলিশ ফাঁড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত সাইফুল ইসলাম কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কবুরহাট গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। পারিবারিক কলহের কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, ডিউটিরত অবস্থায় নিজের ব্যবহৃত রাইফেল মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করেন সাইফুল ইসলাম। গুলির শব্দে পুলিশ ফাঁড়ির অন্যান্য সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে তাকে পড়ে থাকতে দেখেন। হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় মেহেরপুর পুলিশ সুপারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে তদন্ত করছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
পুলিশে কর্মরত অবস্থায় চলতি বছরের প্রথম দিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের ফরিদা খাতুন এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম। মামলার তদন্তকারী অফিসার মুজিবনগর থানার এসআই আজম বিশ্বাস জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা সাইফুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঠিক তথ্য জানা যাবে বলে তিনি যানান।
এদিকে, রতনপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত কনস্টেবল সাইফুল ইসলামের আত্মহত্যার রহস্য খুঁজতে নিবিড়ভাবে কাজ করছে মেহেরপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দল। আত্মহত্যার পরপরই মেহেরপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
৫৬ দিন ছুটি ভোগ করা, স্বামী স্ত্রী দুজনই এক জেলাতে পোস্টিং (মুজিবনগর এবং মেহেরপুর সদরে কর্মরত), সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছুদিনের মধ্যে তাকে স্ত্রীর কাছে মেহেরপুর সদরে পোস্টিং দেয়ার পরও কেন পুলিশ সদস্য মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করলো তা খুঁজছে পুলিশের এই তদন্ত দল।
কেন এভাবে নিজেকে শেষ করলো পুলিশ সদস্য সাইফুল তার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সহকর্মীরা, স্ত্রীসহ পুলিশের কেউ।
নিহত সাইফুলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সাইফুলের বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার চাপড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। চলতি বছরে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের ফজলুর সরকারের মেয়ে ফরিদা খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মেহেরপুরে দুজনেই চাকরি করতেন; সেই সুবাদে দুজনের পরিচয় হয় এবং পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে। বয়সে স্বামী-স্ত্রী দুজনে এক বছরের ছোট বড় ছিলেন। দুজনের বর্তমান কর্মস্থল ছিলো ২০ মিনিট দূরত্বের।
পুলিশ অফিসসূত্রে জানা গেছে, নতুন বিয়ে হওয়ায় সাইফুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যেই তাকে ছুটি দিতেন। অনুরূপ ছুটি তার স্ত্রীও ভোগ করতো। দাম্পত্য জীবনও ছিল খুবই মধুর। গত ৬ মাসে সাইফুল ৫৪দিন ছুটি ভোগ করেছে। শুধু তাই নয় দূরত্ব ঘোচাতে কর্তৃপক্ষ তাকে স্ত্রীর সঙ্গে মেহেরপুর সদরে পোস্টিং দিয়েছিল। ছুটি বেশি ভোগ করায় এই ঈদে সাইফুল ছুটির আবেদনও করেননি। ক্যাম্পে নাইট ডিউটি করাকালীন মাস্ক পড়া অবস্থায় তিনি নিজের অস্ত্রের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। তাহলে এমন কি হলো যে কারণে পুলিশ সদস্য নিজ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করলো। এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। বিশেষ করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই কারণ খুঁজতে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম জানান, একজন তরুণ পুলিশ সদস্যের এমন মৃত্যু খুবই দুঃখজনক ও বেদনার। পুলিশ সুপার রাফিউল আলম স্যারের নির্দেশে এই আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ খুঁজতে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। একাধিক বিষয় মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজও শুরু করে দিয়েছে। আশা করা যায় দ্রুতই বেরিয়ে আসবে এমন মৃত্যুর কারণ কি।
এদিকে নিহত কনস্টেবল সাইফুল ইসলামের চাচা লিটন হোসেন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সহকর্মী নারী পুলিশ সদস্যকে বিয়ে করেছেন ভাতিজা সাইফুল ইসলাম। বিয়ে করতে গিয়ে এবং কিছু জমি কিনতে গিয়ে সে অর্থনৈতিক শুন্যতায় ভুগছিল। কাউকে কিছু দিতে পারবে না বলে এবার ঈদে বাড়িও আসেনি। এই সমস্ত নিয়ে চরম মানসিক অস্থিরতায় ভুগতো সাইফুল। নিজেকে ইদানিং খুব উদভ্রান্তের মত রাখতো। সব কথায় হতাশা প্রকাশ করতো।
স্ত্রী ফরিদা খাতুন জানান, রাতেও তার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। হতাশার কথা বললে সান্ত¡না দেন। সবসময় পরিবার পরিজন নিয়ে বেশি চিন্তা করতো। তাই মানসিকভাবে অস্থিরতার মধ্যে চলতো সব সময়।
গত ২১ জুলাই নিজের সরকারি অস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন মেহেরপুরের মুজিবনগর থানার রতনপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত (কন্সটেবল নং-৫৪৩) সাইফুল ইসলাম।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More