মেহেরপুরে অপারেশন টেবিলে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের মামলা

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর দারুস সালাম ক্লিনিকে অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যুতে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মেহেরপুর আমলি আদালতের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম শরিয়ত উল্লাহ গতকাল সোমবার মিস কেস করেছেন।

এই মামলাটি মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলকে তদন্ত ও অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।  বিজ্ঞ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, প্রায়ই মেহেরপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার অবহেলার এবং বিধি বহির্ভূতভাবে ক্লিনিক পরিচালনার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর সাথে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত। একজন অসুস্থ মানুষ চিকিৎসক ও ক্লিনিকের ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করে নিজের শরীরের ওপর হস্তক্ষেপের অধিকার প্রদান করে। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসকের অবহেলা একজন রোগীর সাথে প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের শামিল। যা দ-বিধির ৪০৬ ও ৪২০ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইসাথে রোগীর জীবন বিপন্ন হলে আরও অন্যান্য ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আদালতসূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ঢোলমারী গ্রামের মিলন হোসেনের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় মেহেরপুর শহরের কলেজ মোড়ে অবস্থিত দারুস সালাম ক্লিনিকে। ক্লিনিক মালিক ডা. আব্দুস সালাম নিজেই অপারেশন করেন। অপারেশন টেবিলেই সুমাইয়ার মৃত্যু হয়। প্রকৃতপক্ষে অপারেশনের সময় নিয়মানুযায়ী অন্যান্য চিকিৎসকদের উপস্থিতির বিষয়টি ডা. আব্দুস সালাম মিডিয়াতে বললেও কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তিনি একাই সব চিকিৎসকের দায়িত্ব নিয়ে অপারেশন করেছিলেন। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ডা. আব্দুস সালামকে দায়ী করেন স্বজনরা। এই ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার বিষয়টি আদালতের নজরে পড়ে। এতে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিজ্ঞ আদালত মিস কেসটি দায়ের করেন।

আদালতসূত্রে আরও জানা গেছে, ডা. সালাম একাই অপারেশন করেছেন। এটা সঠিক হয়ে থাকলেও তা একটি গুরুতর আইনের লঙ্ঘন এবং ইচ্ছাকৃত অবহেলা যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি মর্মে আদালতের গোচুরীভূত হয়েছে। জনস্বার্থ ও ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্যে পুরো ঘটনাটির প্রশাসনিক তদন্তের পাশাপাশি একটি বিস্তারিত অনুসন্ধান হওয়া সমীচীন বলে মনে করেন বিজ্ঞ আদালত। তাই দা কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এর ধারা ১৯০(১)(গ) অনুযায়ী বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদটি বিবেচনায় নিয়ে মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলকে (স্বয়ং) তদন্ত অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।

একই সাথে মেহেরপুর সিভিল সার্জনকে এই তদন্তে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতসূত্রে জানা গেছে, প্রায়ই মেহেরপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসায় অবহেলার এবং বিধি বহির্ভূতভাবে ক্লিনিক পরিচালনার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এর সাথে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত। একজন অসুস্থ মানুষ চিকিৎসক ও ক্লিনিকের উপর আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করে নিজের শরীরের ওপর হস্তক্ষেপের অধিকার প্রদান করে। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসকের অবহেলা একজন রোগীর সাথে প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের শামিল। যা দ-বিধির ৪০৬ ও ৪২০ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইসাথে রোগীর জীবন বিপন্ন হলে আরও অন্যান্য ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও ঞযব গবফরপধষ চৎধপঃরপব ধহফ চৎরাধঃব ঈষরহরপ ধহফ খধনড়ৎধঃড়ৎরবং (জবমঁষধঃরড়হ) ঙৎফরহধহপব ১৯৮২, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ অনুসারে মানদ- অনুসরণ না করলে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমতাবস্থায় মেহেরপুর সদর থানাধীন সকল হাসপাতাল ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অত্র আদালতে দাখিলের জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। এই তালিকার মধ্যে কোন কোন প্রতিষ্ঠান আইন ও বিধি বিধান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না তা চিহ্নিত করে দিতেও সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন আদালত।

মেহেরপুর জেলার কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পূর্ব থেকে। রোগী মৃত্যুর ঘটনার জানাজানি হলে স্বজনদেরকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে গেছেন অনেক ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক মালিক এবং এর সাথে জড়িতরা। ফলে কোন অপরাধের বিচার আলোর মুখ দেখেনি। অপরদিকে গরিব মানুষের পক্ষে এসব শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ও সম্ভব নয়। ফলে অনেকদিন থেকেই চলে আসছে রোগী নিয়ে অবহেলার বিষয়গুলো। তাই আদালতের এ ধরনের জনস্বার্থমুখী উদ্যোগে ব্যাপক সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের এই উদ্যোগ সাধুবাদ জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে এসব অপকর্ম বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More