মেহেরপুর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত রওশন

কাজী আরেফসহ ৫ খুন মামলা

দীর্ঘ ২২ বছর ফেরারী : অবশেষে গ্রেফতার
মেহেরপুর অফিস: হত্যা মামলায় মৃত্যুদ- পাওয়া রওশনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে মেহেরপুরের পুলিশ। তিনি পরিচয় গোপন করে ২২ বছর পলাতক ছিলেন। গত ১৯ আগস্ট রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল বাকি হত্যা মামলার মৃত্যুদ- পাওয়া। এ ছাড়াও রওশনের বিরুদ্ধে জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা কুষ্টিয়ার কাজী আরেফ আহম্মেদসহ বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা রয়েছে। মেহেরপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিপুতি কুমার বিশ্বাস গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশে দেন। উদয় ম-ল পরিচয়ে রাজশাহীর একটি গ্রামে ছিলেন রওশন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান আবদুল বাকি ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় নেতা কুষ্টিয়ার কাজী আরিফ আহম্মেদসহ আরও পাঁচ নেতা হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি রওশন। এ ছাড়াও রওশনের বিরুদ্ধে গাংনীর ভবানিপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন মাস্টার এবং আলম হুজুর হত্যা মামলা রয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রওশনকে মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাসের আদালতে তোলা হয়। কালো, ধূসর ও কলাপাতা রং এর সংমিশ্রণে তৈরি টি শার্ট পরে রওশন আদালতের কাঠগড়ায় বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস আসামি রওশনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়ার নির্দেশ দেন। পরে পুনরায় কড়া পুলিশি প্রহরায় তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।
এজাহার থেকে জানা যায়, গাংনীর ৩ নম্বর কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল বাকির সঙ্গে তৎকালীন মেম্বার ও উপজেলার কাজিপুর গ্রামের নুরু মিলিটারির মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিলো। ১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল সকালে প্রকাশ্যে নুরু ও রওশন গুলি করে হত্যা করে আবদুল বাকিকে। ওই সময় তার মেজ ছেলে ফারুক আব্দুল¬াহ বাশার গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আবদুল বাকির ছোট ভাই সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন গাংনী থানায় হত্যা মামলা করেন। বাকি হত্যার পর ২০০০ সালের ২১ জুন রওশন ও তাদের সহযোগীরা গাংনীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন মাস্টারকে হত্যা করেন। আমজাদের চাচাতো ভাই গোলাম রহমান গাংনী থানায় হত্যা মামলা করেন নুরু, রওশনসহ অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। এর আগে ১৯৯৯ সালের ১০ জানুয়ারি ভবানীপুর গ্রামের আলম হুজুরকে অপহরণ করে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেন রওশন ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করে। একই বছর ১৬ ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জাসদের একটি জনসভায় ব্রাশ ফায়ার করেন নুরু ও রওশনরা। এ সময় নিহত হন জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরিফ আহমেদ, তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন এবং শমসের ম-ল। ওই দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। কাজী আরিফের হত্যার কিছুদিন পর কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকায় খুন হন নুরু মিলিটারি। আরিফ হত্যার মামলায় ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট রওশন আলীসহ ১০ জনের ফাঁসি এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-ের নির্দেশ দেয় কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামি হাবিবুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট ৯ আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে। খালাস পায় একজন। সাজা মওকুফ করা হয় ১২ জনের। ওই দুই আসামি এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর ফাঁসির দ-প্রাপ্তদের রিভিউ আবেদনও নাকচ করে দেয়া হয়। পরে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তা নাকচ করে দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি যশোরের কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি হয় তিন আসামির। তারা হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের রাজনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান, কুর্শা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে কারাগারে একজনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া আসামি রওশন। বাকিরা পলাতক। আবদুল বাকি হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল মেহেরপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত রওশনকে মৃত্যুদ- দেয়। মামলা চলাকালে নুরু খুন হওয়ায় তাকে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বাকির মেজ ছেলে ফারুক আব্দুল¬াহ বাশার বলেন, ‘আমার বাবাকে হত্যার সময় আমি গুলি খেয়েও প্রাণে রক্ষা পাই। এই রওশন ও তার বাহিনী মিলে আমার ও আমার পরিবারের লোকদেরকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আমরা এই খুনির মৃত্যুদ- কার্যকর না হওয়া পযর্ন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More