আনিসুরের আত্মহত্যার কারণ টাকা না পাওয়ার হতাশা নাকি ‘ব্ল্যাকমেলিং’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কেবল লগ্নি করা অর্থ ফেরত না পাওয়ার হতাশা থেকেই ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছেন? নাকি এর পেছনে আরও কারণ আছে। এ বিষয়ে গত দুদিনেও আনিসের পরিবার স্পষ্ট কোনো ধারণা পায়নি। তবে আনিস তার ফেসবুক পোস্টে হতাশার কারণ হিসেবে পাওনা টাকা উদ্ধার করতে না পারার পাশাপাশি তাকে ‘হেনস্তা’ ও ‘ব্ল্যাকমেলিংয়ের’ কথাও উল্লেখ করেছেন। হেনোলাক্স কোম্পানির কাছে লগ্নি করা অর্থ ফেরতের দাবিতে এর আগে গত ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান (গাজী আনিস)। সেখানে ব্ল্যাকমেলিংয়ের (প্রতারণা) কথা উল্লেখ করলেও বিস্তারিত বলেননি। তবে ওই সংবাদ সম্মেলনে সহযোগিতা করেছে এমন একটি সূত্র জানায়, টাকা ফেরত চাওয়ায় আনিসকে যে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও চিত্রও আনিস ওই সূত্রটিকে দেখান।

আনিসুর রহমান গত সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি গত মঙ্গলবার সকালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে আনিসুরের ভাই নজরুল ইসলাম হেনোলাক্স কোম্পানির (আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি) ব্যবস্থাপক পরিচালক নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ও কোম্পানির পরিচালক ফাতেমা আমিনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়। গতকাল রাত আটটায় র‌্যাব জানায়, নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিনকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আনিসের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেনোলাক্স কোম্পানিতে মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি করে ফেরত না পাওয়া আনিস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, এটা জানতেন স্বজনেরা। তবে আনিস গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করবেন এটা কেউ ভাবতে পারেননি। আগে অর্থলগ্নির বিষয়টি নিয়ে স্বজনদের কারও কারও সঙ্গে আলোচনা করলেও সর্বশেষ গত একমাস তিনি স্বজনদের কিছু বলেননি।

মামাতো ভাই তানভীর ইমামকে কিছু কিছু বিষয়ে বলতেন। তানভীর বলেন, ঠিকাদারির পাশাপাশি কুষ্টিয়ায় পরিবহন ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসা রয়েছে আনিসের। তিনি কুষ্টিয়া শহরের থাকতেন। সর্বশেষ কবে ঢাকায় এসেছেন, পরিবারের কেউ জানতেন না। আত্মহত্যার ঘটনার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, ঘটনার দুদিন আগে নিজের সেডান গাড়ি ও মোটরসাইকেল বিক্রি করে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন। এই টাকা কেন এনেছেন, ঢাকায় কোথায় ছিলেন; এর কিছুই এখন পর্যন্ত তারা জানেন না।

স্বজনেরা জানান, আনিসুর রহমান ১৯৯৩ সালে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। দুই বছর আগেও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে সাত বছর আগে। তার তিন মেয়ে। একজন এইচএসসি, একজন এসএসসি ও একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। সন্তানেরা তাদের মায়ের সঙ্গে যশোরে থাকে।

আনিসুরের মামাতো ভাই তানভীর ইমাম হাসান মনে করেন, আনিসের এবার ঢাকায় আসার বিষয়টি রহস্যজনক। আনিস সর্বশেষ ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন গত ৩১ মে। তাতে বলেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের কর্ণধার নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। ঢাকায় এলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং উপহার বিনিময় হতো।

নুরুল আমিন ও স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে বিদেশেও গিয়েছেন একাধিকবার। এর দুইবছর পর এই দম্পতির হেনোলাক্স গ্রুপে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন আনিসুর রহমান। ন্যায্য পাওনা হিসেবে এখন এটি দাঁড়িয়েছে তিন কোটি টাকার বেশি। এসব টাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অর্থ ফেরত না দেয়ায় কুষ্টিয়ার আদালতে হেনোলাক্সের নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে তিনি দুটি মামলা করেছেন। ফেসবুক পোস্টে এই দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি শুভাকাক্সক্ষীদের সোচ্চার হওয়ার আশা প্রকাশ করেন।

এই পোস্টের ৩৪ দিনের মাথায় তিনি আত্মহত্যা করলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, অর্থ ফেরত পাওয়া ছাড়া আনিসের আত্মহত্যার আর কোনো কারণ পুলিশ গতকাল পর্যন্ত জানতে পারেনি। আর ‘ব্ল্যাকমেলিংয়ের’ বিষয়টি আসলে কী, সেটা এখনো পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। যতটা জানা গেছে, হেনোলাক্স কোম্পানির কাছ থেকে চেক নেয়ার জন্য আনিস ঢাকায় এসেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More