আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

অবাধ সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা অংশ নিবে দলটি

স্টাফ রিপোর্টার: আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান এবং যোগাযোগ বাড়ানোসহ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্র্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি বলছেন অনেকে। বিএনপি’র নেতারা বলছেন, নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত তারা। এর জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতির দরকার নেই। দলটির নেতাদের ভাষ্য, অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে যেকোনো নির্বাচনে অংশ নিবে দলটি। এখন তাদের একটাই লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন। এরপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছে বিএনপি। এর জন্য সমমনা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার তোড়জোড় চালাচ্ছে।

যে ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই প্রথম ধাপে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন বিএনপি নেতারা। সংলাপে দলগুলো আগামী নির্বাচন এবং আন্দোলন সংগ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দলগুলো বিএনপি’র কাছে যেসব দাবি-দাওয়া জানিয়েছে এসব বিষয়ে বিএনপি’র শীর্ষ নেতার সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

জানা গেছে, শিগগিরই সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ফের সংলাপ শুরু করবে বিএনপি। সংলাপ শেষে আন্দোলন এবং নির্বাচন নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক রূপরেখা দেয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। বৃহত্তর আন্দোলনের রূপরেখায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ইভিএম বাতিল এবং সুষ্ঠু নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খুব দ্রুতই যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।

এদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে পরোক্ষভাবে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণার পর থেকে নিজেদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। জোটে থাকার কারণে জামায়াতের জন্য যেসব আসন ছেড়ে দেয়া হতো এগুলোতে দলীয় নেতাদের কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিজেদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশের প্রতিটি আসনে জরিপ পরিচালনা করছে দলটি। এর জন্য দলীয় একটি পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের খোঁজে জরিপের প্রক্রিয়া চলানো হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এই জরিপ শেষ হওয়ার কথা। আসনভিত্তিক নির্দিষ্ট ফরমে এই জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি সাংগঠনিক পরিচিতি, বিগত দিনে মামলা-হামলার বিবরণ, আগের নির্বাচনে তার অবস্থান, নির্বাচনী ফলাফল, বিগত দিনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহ কিংবা সিদ্ধান্ত অমান্য করার ইতিহাস, আসনভিত্তিক অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে তার গ্রহণযোগ্যতা, ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে যোগ্য ও ত্যাগীদের ফিরিয়ে আনার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যারা দলে ফিরে আসতে আবেদন করেছেন, তাদের বেশির ভাগকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া যেসব নেতা এতোদিন দলের মধ্যে কোণঠাসা ছিলেন কিংবা নিষ্ক্রিয় তাদের সক্রিয় করা হচ্ছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হলে আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছে দলটি। এরই মধ্যে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানি, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। বিএনপি’র আন্তর্জাতিক কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, গত এক মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। এসব বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের বিরোধী মতের লোকদের গুম, খুনসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া বিএনপি’র সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে এখন লন্ডন থেকে সরাসরি দেখভাল করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

লন্ডন থেকেই বিএনপি’র প্রতিনিধিদল সমপ্রতি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর করেছে। এছাড়া ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিএনপি নেতারা। গত ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে সমাবেশ করছে বিএনপি। এসব সমাবেশে সরকার দলীয় লোক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। বিএনপি’র নেতারা বলছেন, মামলা হামলা করে আন্দোলন দমানো যাবে না। আন্দোলন চলমান থাকবে। এ ব্যাপারে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আগেই বলেছি, এই সরকার থাকলে আমরা নির্বাচনে যাবো না। আমাদের লক্ষ্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর সরকার পতন হলে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা যেহেতু মধ্যমপন্থি রাজনৈতিক এবং নির্বাচনমুখী দল তাই সব সময় আমাদের প্রস্তুতি আছে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দল। আগামীর আন্দোলন, সাংগঠনিক কার্যক্রম, নির্বাচন সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। এসব তো আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, আমি বিএনপি’র নীতিনির্ধারকের কেউ না। তবে আমি মনে করি, বিএনপি একটি জনপ্রিয় এবং জনসমর্থিত দল। এই দলের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। ভোটাররা প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, বিএনপি নির্বাচনে গেলে জিতবে-এটাই বর্তমান বাস্তবতা। এটা মানুষের চাহিদা এবং প্রত্যাশা। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলছে এবং চলবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More