ঘরছাড়া তরুণরা পাহাড়ে ভারি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিতো

বান্দরবানে র‌্যাবের অভিযানে ৭ জঙ্গিসহ আটক ১০ : বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: এক কোটি আট লাখ টাকার চুক্তিতে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতো বান্দরবানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। ২০২১ সালে এই চুক্তি হয়, যার মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত ছিলো। কোটি টাকার এই চুক্তি অনুযায়ী মাসে তিন লাখ টাকা করে পেত কেএনএফ। যৌথ বাহিনীর অভিযানে গত বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্র ও গুলিসহ সাত জঙ্গি এবং তিন কেএনএফ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রশিক্ষণ সম্পর্কে এ তথ্য দিয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যৌথ বাহিনীর চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ব্যাপারে জানাতে র‌্যাব এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল রাতে রোয়াংছড়ি বাজার এলাকা থেকে তিনজন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তার কেএনএফের সদস্যরা হলেন রোয়াংছড়ির বাজার এলাকার লালমুন সয় বমের ছেলে জৌথান স্যাং বম (১৯), লালমিন সম বমের ছেলে স্টিফেন বম (১৯) ও জিক বিল বমের ছেলে মালসম বম (২০)। তাদের বাড়ি বান্দরবানের জুরবারাংপাড়ায়। তিনজনই কেএনএফের সামরিক শাখার সদস্য ও গোপন আস্তানায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সদস্যরা হলেন, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার মৃত সৈয়দ আবুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিক (৩১), পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থানার মো. শাহ আলমের ছেলে ইমরান হোসেইন সাওন (৩১), ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে কাওসার শিশির (৪৬), সিলেটের বিয়ানিবাজার থানার ফজলুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জনু (২৭), বরিশাল জেলার মুলাদি থানার নয়ন মৃধা নুরুজ্জামানের ছেলে মো. ইব্রাহিম আলী (১৯), সিলেট জেলার গোপালগঞ্জের আতিকুল আলমের ছেলে আতিকুল আলম। সুনামগঞ্জ জেলার চাতকের আব্দুস সালামের ছেলে রুফু মিয়া (২৮)। গ্রেপ্তার তিন কেএনএফ সদস্য র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, কেএনএফের সামরিক শাখার নাম কেএনএ। তারা এর সদস্য। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বম। তার সঙ্গে ২০২১ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমীরের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। শারক্বীয়ার উপদেষ্টা শামী মাহফুজের সঙ্গে নাথান বমের একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত জঙ্গি সদস্যদের কেএনএফের গোপন আস্তানায় প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা। এর বিনিময়ে জঙ্গিরা কেএনএফকে মাসিক তিন লাখ টাকা এবং কেএনএফের সদস্যদের সমস্ত খরচ বহন করবে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সংগঠনের দাওয়াতি শাখা হিজরতের নামে বিভিন্ন সদস্য সংগ্রহ করে পটুয়াখালী, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জ্যেষ্ঠ সদস্যদের হেফাজতে ‘সেফ হোমে’ রেখে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। সেখানে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণদের পাহাড়ে কেএনএফের গোপন আস্তানায় নিয়ে আসা হতো। র‌্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর বেশি। যার মধ্যে ৩৮ জনের নাম-ঠিকানা র‌্যাবের হাতে রয়েছে। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণরা এখন পার্বত্য অঞ্চলে দুর্গম এলাকায় অবস্থান করে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদেরকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানো, আইইডিসহ বিভিন্ন ধরনের বোমা তৈরী, চোরাগুপ্তা হামলা, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিভিন্ন কৌশল প্রদান করা হচ্ছে। খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি র‌্যাবের জালে কয়েকজন জঙ্গি আটক হয়। তাদের থেকে র‌্যাব তথ্য পায় যে, পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তাদেরকে অর্থের বিনিময়ে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। আটক জঙ্গিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ তারিখ থেকে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের তিন উপজেলায় অভিযানে নামে র‌্যাব। অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সাত সদস্য ও কেএনএফ’র এই তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যরা ক্যাম্প ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে, এসবিবিএল বন্দুক ৯টি, এসবিবিএল বন্দুকের গুলি ৫০ রাউন্ড, কার্তুজ কেইস (এসবিবিএল বন্দুক) ৬২টি, আইইডি (হাত বোম্ব) ৬টি, কার্তুজ কেইস (এসএ) ১টি, কার্তুজ বেল্ট ২টি, দেশীয় পিস্তল ১টি, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ওয়াকিটকি ১টি, ওয়াকিটকি চার্জার ৩টি, কুকি-চিন স্টেট লিখা ১০টি মানচিত্র ও অন্যান্য ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানান, র‌্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮০০ এর বেশি জঙ্গিকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে। জঙ্গিদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাহাড়ে অবস্থানরত পাহাড়িদের বিরুদ্ধে এই অভিযান নয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More