চতুর্থ ঢেউয়ে চুয়াডাঙ্গাসহ ৪৮ জেলায় ছড়িয়েছে করোনা রোগী

দেশে করোনায় আরও দুজনের মৃত্যু : শনাক্ত এক হাজার ৯০২ জন

স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর যেখানে কোনো দিন ৬০ জেলায়, কোনো দিন ৬২ জেলায় করেনার রোগী পাওয়া যাচ্ছিল না, সেখানে এখন ২৪ ঘণ্টায় রোগী মিললো চুয়াডাঙ্গাসহ ৪৮ জেলায়। গতকাল একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৭৭ জনে দাঁড়ালো। যা ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার বিবেচনায় ৫০ শতাংশ। গতকাল রোববার বুধবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট ২টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসে। এর মধ্যে শনাক্ত হয় একজনের। গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ সুস্থতার সনদ পাইনি। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হলেন ৭ হাজার ৬৫৪ জন। ২৪ ঘন্টার করোনায় কারোর মৃত্যুর হয়নি। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৯০ এবং জেলার বাইরে ২০ জন। চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হোসেন বলেন , গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৯০ জনের এবং জেলার বাইরে ২০ জনের। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন মজুদ রয়েছে৷

ভাইরাসটির চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর এই চিত্র দেখা গেলো। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের অনীহা, মাস্ক একেবারেই না পরার প্রবণতা এবং মানুষের জটলা ও ভিড়ের কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে কোরবানি পশুর হার ও ঈদ যাত্রা নিয়ে উদ্বেগের কথা বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ নীতি পুনঃপ্রবর্তন করেছে। সেই সঙ্গে নিজের কর্মীদেরকে মাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। কিন্তু দুই নির্দেশনার কোনোটির প্রয়োগ নেই বললেই চলে। সাধারণের মতোই সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যেও মাস্ক পরার প্রবণতা কম। করোনার প্রতিটি ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক পরায় জোর দিয়ে প্রশাসনিক অভিযান চলেছে। তবে এবার ভ্রাম্যমাণ আদালত এখন পর্যন্ত নামানো হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জেলার মধ্যে ১৬টি জেলায় করোনা রোগী শূন্যে ছিল। তবে এর ৮০ শতাংশ রোগীই ঢাকা বিভাগের। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ২৪৬ টি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৯০২ জন। নতুন শনাক্তের মধ্যে এক হাজার ১৪৪ জন ঢাকা জেলার। এই নিয়ে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার এই সংখ্যা ছিলো ৬ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৯ হাজার ১৬২ জন। মৃতদের একজন ঢাকা বিভাগের, অন্য জন চট্টগ্রামের। একজন পুরুষ ও একজন নারী। গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। টানা ১৭ দিন ৫ শতাংশের বেশি শনাক্তের হার পাওয়া যাওয়ার পর দেশে চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩০৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৮ হাজার ২৯৭ জন। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর। গত ২১ জানুয়ারি দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দেয়। প্রায় তিন মাস পর ১১ মার্চ নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর তিন মাস করোনা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সংক্রমণ। টানা দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের বেশি হওয়ার পর গত ২৯ জুন করোনার চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পরার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এর পর আরও চার দিন শনাক্তের হার ১৩ শতাংশের বেশি দেখা গেছে। সংক্রমণ বাড়লেও করোনার যে ধরনটি এবার ছড়াচ্ছে, সেটির কারণে মানুষের মধ্যে জটিলতা হচ্ছে কম, হাসপাতালে সেভাবে ভিড় নেই, অক্সিজেনের অভাবও দেখা যাচ্ছে না, আইসিইউএর চাহিদাও এবার তুঙ্গে নয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুর হার ছিল তুলমামূলক কম। তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় যখন চতুর্থ ঢেউ আসতে শুরু করছিল, সে সময় মৃত্যুর সংখ্যাটি কিছূটা বাড়লেও এখন পর্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গত তিন মাসে করোয় এক দিনে সর্বোচ্চ ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২৪ ঘণ্টায় দুই শ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য এসেছিল একাধিকদিন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More