ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের ৭ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরে যাওয়ায় নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের সাতজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতে মারাত্মক আহত অ্যাম্বুলেন্স চালকও মারা গেছেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় ২ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। অ্যাম্বুলেন্সটি সরানোর পর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা থেকে রোগী ও স্বজনদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি পদ্মা সেতু পার হয়ে বরিশালের দিকে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাম্বুলেন্সটির সামনের চাকা ফেটে যায়। এ সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে অ্যাম্বুলেন্সটি এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কা খায়। এতে অ্যাম্বুলেন্সের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মুহূর্তের মধ্যে সেটিতে আগুন ধরে যায়। এর আগে চালক অ্যাম্বুলেন্স থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। তিনি মারাত্মক দগ্ধ ও আহত হন। আর অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী ও স্বজনরা পুড়ে মারা যান।

হাইওয়ের ফরিদপুর অঞ্চলের এসপি মাহবুব আলম জানান, ঘটনাস্থলেই তিন নারী, দুই পুরুষ ও দুই শিশু মারা যায়। লাশগুলো ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর আহত চালক মৃদুলকে প্রথমে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। তবে ঢাকায় নেয়ার পর চালক মারা যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসপি মাহবুব আলম আরও বলেন, আগুনে পুড়ে মা মারা গেছেন। কিন্তু তিনি তার শিশুসন্তানকে ছাড়েননি। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মা ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন-প্রবাসী আজিজার রহমানের স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৫৫), তার মেয়ে কমলা পারভিন (২৬) ও বিউটি বেগম (২৪) এবং নাতি-নাতনি আরিফ (১২), মেহেদি (১২), হাসিব (৮) ও হাফসা (১)। কমলা ঢাকায় বসবাস করেন। ছোট মেয়ে বিউটি ভাঙ্গা উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমরা গ্রামের মাহমুদ ইসলাম রনির স্ত্রী। শোকাহত পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, দুর্ঘটনার সময় বেঁচে যাওয়া অগ্নিদগ্ধ অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল মালো (৩৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকেল ৫টার দিকে মারা গেছেন। চালক মৃদুল মালো ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকার তকিমোল্যা সড়কের সুভাষ মালোর ছেলে। এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি দুর্ঘটনাকবলিত স্থান থেকে সরানো হয়েছে।

ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবু জাফর জানান, খবর পেয়ে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অ্যাম্বুলেন্সে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে পুলিশ ক্রেনের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সটি সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহ্বান তালুকদার জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বিপুল চন্দ্র দে’কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া নিহত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে এবং আহতকে ১০ হাজার টাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে।

ফরিদপুরের এসপি শাহজাহান জানান, দুর্ঘটনার পর যানজটের সৃষ্টি হলেও দ্রুত সময় হাইওয়ে ও থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সক্ষম হন। দুর্ঘটনার শিকার পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।

জানা গেছে, উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজিজার রহমানের স্ত্রী তাছলিমা বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হলে এক মাস আগে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসা শেষে বড় মেয়ে কমলার বাসায় ছিলেন। শনিবার তারা বোয়ালমারী গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় সাতজনই প্রাণ হারান। বোয়ালমারীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেয়া হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More